স্টাফ রিপোর্টার ::
শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাউয়াজুড়ি হাওরে পুরাতন বাঁধ কেটে এই বাঁধের মাটি বাঁধেই দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পিআইসির লোকজন। বাঁধ প্রস্তুত করার নাম করে বাঁধের মাটি কাটার এই চিত্র শুধু শান্তিগঞ্জ উপজেলায় নয়, জেলার অন্যান্য উপজেলার হাওরেও পুরাতন বাঁধ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে থাকা অসাধু ব্যক্তিরা অধিক মুনাফা লাভে অক্ষত বাঁধ কেটে নতুনভাবে বাঁধ তৈরির করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট হাওরপাড়ের কৃষকরা। ইঁদুর কাকড়ার গর্ত ভরাট ও বাঁধের উপরিভাগ প্রস্তুত করতে মেশিন দিয়ে বাঁধের কিছু মাটি সরানো হলেও এটি বাঁধকে টেকসই করতে করা হচ্ছে বলে দাবি পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্টদের। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এই যুক্তিকে বাঁধের স্থায়িত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
গত ২১ জানুয়ারি সরেজমিনে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর, কাউয়াজুড়ি হাওর, খাই হাওর ও সাংহাই হাওর ঘুরে পুরাতন বাঁধের মাটি কাটার সত্যতা পাওয়া যায়। খাই হাওরের ৩১, ২৪, ২৭নং প্রকল্পে পুরাতন বাঁধের স্লোভের মাটি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে বাঁধে নিয়ে আসা হচ্ছে। বাঁধের উপর কেটে সমান করে রাখা হয়েছে। দূরে থেকে দেখলে মনে হবে এ যেনো নতুন বাঁধ। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জানান, এটি নাকি বাঁধে মাটি ফেলার নিয়ম। এভাবে বাঁধ প্রস্তুত করে নতুন মাটি ফেলতে হয়।
উপজেলার কাউয়াজুড়ি হাওরে ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩নং পিআইসির একই অবস্থা। অক্ষত বাঁধ কেটে সমান করা হচ্ছে। টেকসই বাঁধ কেটে নতুনভাবে বাঁধে মাটি ফেলছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরাতন বাঁধের মাটি কেটে বিশাল এলাকাকে বাঁধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন শান্তিগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ বলেন, আমি সরেজমিনে এসব বাঁধ পরিদর্শন করেছি। বাঁধে নতুন মাটি পাইনি। পুরাতন অক্ষত বাঁধ কেটে আবার বাঁধে তোলা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এটি নাকি বাঁধ প্রস্তুতের নিয়ম। এতে নাকি বাঁধের কমপেকশন হয়। আমরা বুঝতে পারছি না বাঁধ কেটে কিভাবে বাঁধের স্থায়িত্ব রক্ষা পাবে।
সংগঠনের তাহিরপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফুল আলম বলেন, তাহিরপুর উপজেলার অনেক হাওরের পুরাতন বাঁধ কেটে বাঁধ করা হচ্ছে। বাঁধের মাটি দিয়ে বাঁধ। এযেনো আজব কা-। নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দ হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুরাতন বাঁধের মাটি কাঁটার একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। এটি বড় ধরনের অনিয়ম বলে উল্লেখ করেছেন তারা। এটি বন্ধে প্রশাসনের দৃষ্টিআকর্ষণ করেছেন তারা।
ইঁদুর-কাকড়ার গর্ত কমপেকশন করতে বাঁধের মাটি কাটার কথা জানিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পাউবো কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন খান বলেন, এটি বাঁধের কাজের সিস্টেম। বাঁধের উপরিভাগ সমান করতে হয়। তাছাড়া পুরাতন বাঁধে ইঁদুর-কাকড়ার গর্ত থাকে। বাঁধ কমপেকশন করতে বাঁধ মেশিন দিয়ে আঁচড়াতে হয়। তবে এই বলে বাঁধের মাটি গভীর করে কাটা যাবে না।
এদিকে বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম করা যাবে না বলে সাফ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত সভায় বাঁধ নির্মাণে সংশ্লিষ্ট পিআইসিদের মনিটরিংয়ের আওতায় আনার কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এবার সুনামগঞ্জের বোরো ফসলের সুরক্ষায় ১৫৫টি টাকা বরাদ্দে ৭৩৩ প্রকল্পে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন।