গত সোমবার (২২ জানুয়ারি ২০২৪) দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “মিলেনি প্রশাসনের সহযোগিতা : হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নিলেন কৃষকরাই”। প্রশ্ন হলো কৃষকের কাছ থেকে প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল কি না? জানা গেছে চাওয়া হয়েছিল। সংবাদ বলছে, “কৃষকরা জানান, বোরো চারা রোপণের সময় আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি আছে। গত এক মাস ধরে সিংরাঘাট হাওরের পানি না নামায় ক্ষেত লাগাতে পারছেন না কৃষকরা। এই এ অবস্থায় বারোকুড়ি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের নালাটি সাময়িকভাবে খননের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, বিএডিসি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেন। বরাদ্দ নেই এই অজুহাতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো একে অন্য দফতরে চিঠি চালাচালি করতে থাকেন। এদিকে ফসল লাগানোর মওসুম চলে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কৃষকরা। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠ ও সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানান।” আমরা আমাদের প্রিয় সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই এবং কৃষিকাজে এবংবিধ যাবতীয় সমস্যাগুলো সমাধোনে নজর দেবেন প্রত্যাশা রাখি।
কিন্তু বিদগ্ধমহলের ধারণা এই যে, প্রশাসনের ভেতরে বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক করিবকর্মা প্রবৃত্তিকে করিতকর্মা প্রবৃত্তিতে পর্যবসিত করা না গেলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন কীছুতেই সম্ভব নয়। সিংরাঘাটের মতো শতসহ¯্র ছোট-বড়ো হাওরে লেগে থাকা এমন বহুবিধি সমস্যার সমাধান করা না গেলে অর্থনীতির চাকায় গতি সঞ্চার হবে না এবং এমন হলে যথারীতি কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন কীছুতেই সম্ভব নয়। কৃষি অর্থনীতিকে পিছিয়ে রেখে অন্তত বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশ উন্নয়নের শিখর স্পর্শ করতে পারে না। এটা কাউকে বলে দিতে হয় না।
সিংরাঘাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংবাদটি প্রমাণ করে যে, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা তথা সফল করে তোলার জন্যে কিংবা জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো (উপজেলা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড) কোনও ভূমিকা রাখতে পারছে না, অথচ চূড়ান্ত বিবেচনায় এটাই তাদের কাজ। কিন্তু কাজ না করেও তারা দেশের মানুষের কাছ থেকে বেতন নিচ্ছেন এবং প্রকারান্তরে কর্তৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আছেন কোনও জবাবদিহিতার সম্মুখীন না হয়ে।
মানুষকে খাদ্য খেয়ে বাঁচতে হয়। জানা কথা : কৃষিকে উপেক্ষা করলে, কৃষিকে প্রশাসনিক অবহেলার শিকার করে খদ্যোৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হবে এবং প্রশাসনের গাফিলতির কারণে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘিœত হলে সরকারের উন্নয়নের বেলুন চুপসে যাবে। দেশের উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়নে পর্যবসিত করতে হলে হাওরাঞ্চলে সিংরাঘাটে উদ্ভূত সমস্যার মতো ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ধরণের শতসহ¯্র সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং তা করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গাফিলতির সংস্কৃতিকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে।