1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুলতানা কামালের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার আন্দোলন প্রসঙ্গে

  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৪

‘বালু পাথর মৎস্য ধান, সুনামগঞ্জের প্রাণ’ ভাটিঅঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ প্রবাদ। এই প্রবাদের বিপরীতে গিয়ে কেউ যখন দেশের উত্তর সীমান্তের ওপাড়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু-পাথরকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলেন, তখন বক্তার এই বক্তব্যের ভেতরে জনকল্যাণবিরোধী মনোভাব-মানসিকতাসহ একধরণের মিথ্যাচার ব্যক্ত হয় এবং প্রকারান্তরে কায়েমী স্বার্থবাদী বালু-পাথরখেকো ব্যক্তি বিশেষের সম্পদবৃদ্ধির নিয়ামক হয়ে উঠে।
অনাদিকাল থেকে এই বালু-পাথর ও তার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পলি নেমে এসে এই অঞ্চলকে প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে, ভাটির জনপদের মানুষের জন্য প্রাকৃতিক আশির্বাদ হয়ে উঠেছে। ভুলে যাবেন না, এই অঞ্চলটি একদা কালিদহ নামের সাগররূপ জলাঞ্চল ছিল। উত্তর থেকে বালু-পাথর-পলি নেমে না এলে কালিদহের গভীর জলে চর জেগে জনপদ গড়ে উঠতো না এবং বোরো ধানের উপযোগী উর্বরতা পেতো না এই জনপদের মাটি। সুতরাং বালু-পাথর নামের প্রাকৃতিক সম্পদকে জনপদের মানুষের জন্য ‘বিপর্যয়’ বলার কোনও যৌক্তিকতা নেই। বরং এই অঞ্চলে বালু-পাথরের প্রাকৃতিক-ঐতিহাসিক অবদানকে স্বীকার করে মানবসৃষ্ট প্রাকৃতিক ভারসাম্য্যহীনতাকে প্রতিরোধ করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বালু-পাথর-পলিকে জীবনধারণের উপায় করে তোলতে হবে, প্রকৃতির সঙ্গে বদলাতে হবে জীবনকে, সেই সঙ্গে প্রকৃতিকেও এবং তা করতে গিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার গহ্বরেও পড়া যাবে না। প্রকৃতির ভেতরেই প্রকৃতির অংশ হয়ে বাঁচতে হবে বাঁচার মতো করে। ব্যক্তিবিশেষের অগাধ সম্পদ আহরণের ফাঁদে পা দিয়ে যাদুকাটা-ধোপাজানের বালু-পাথর লুটের তা-বসঞ্জাত প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার প্রেক্ষিতে নেমে আসা অনিবার্য প্রাকৃতিক প্রতিশোধের মহাযজ্ঞে আত্মবিসর্জন দিলে চলবে না।
একজন সুলতানা কামাল ও একজন শরীফ জামিল (ধরার সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক) যখন বলেন, “প্রতিবছর বর্ষায় হাওরাঞ্চলে পাহাড়ি ঢলের সাথে ব্যাপক বালি ও পাথর এসে হাওর, নদী, ছড়া ও কৃষিজমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই দুর্যোগ এ অঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় তৈরি করছে। তাই মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিত বালি ও পাথর উত্তোলন বন্ধ এবং ছড়া ও কৃষিজমি পুনরুদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ভারতের মেঘালয়ে অপরিকল্পিত খনিজ স¤পদ আহরণের ফলে সেখান থেকে ঢলের সাথে আসা বালি ও পাথর এসে যাদুকাটা নদী ও টাঙ্গুয়ার হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে দ্রুততার সাথে আন্তঃদেশিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’’ তখন উক্ত বক্তব্য আপাত দৃষ্টিতে জনকল্যাণের বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই পরিস্ফূট করে, কিন্তু প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতাকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করার যুক্তি তৈরি করে না, বরং প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধির পথ পরিষ্কার করে।
“বালি ও পাথর এসে যাদুকাটা নদী ও টাঙ্গুয়ার হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।” বক্তব্যের ভেতরে সত্যমিথ্যার মিশ্রণ ঘটে গিয়ে বালু-পাথর ব্যবসায়ীদেরকে যাদুকাটা, ধোপাজান-চলতি নদীতে বালু-পাথর লুটপাটের সুযোগ করে দেয়। অর্থাৎ যাদুকাটা, ধোপাজান ইত্যাদি নদী থেকে বালু-পাথর তোলে নদীকে গভীর করার যুক্তিটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অথচ বর্তমানে বালু-পাথর ব্যবসায়ী কর্তৃক উক্ত নদীগুলো থেকে ড্রেজার ও বোমামেসিন সহযোগে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীগুলো কোথাও কোথাও ৯০ ফুট গভীর এবং অন্যদিকে কিলোমিটার ছাড়িয়ে দেড়-দুই কিলোমিটার প্রশস্ত হয়ে পড়েছে। প্রকৃতিগতভাবে এই নদীগুলোর গভীরতা ব্যতিক্রমবাদে আগাগোড়া সর্বত্রই দুই থেকে তিন/চার ফুটের বেশি ছিল না, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর পড়তো এবং যথারীতি পায়ে হেঁটে নদীগুলো পার হওয়া যেতো। আদিকাল থেকে বালু-পাথর এসে জমা হওয়ার কারণে এই নদীগুলোর গভীরতা কম। এ কারণে কম জলে অধিক মালামাল পরিবহণের উপযোগী নৌকার প্রয়োজন হয় বিধায় ব্রিটিশ আমলে কম গভীর জলে অধিক মালামাল নিয়ে চলাচল করতে পারে এমন নৌকার প্রচলন হয়। এই বিশেষ ধরণের নৌকাটির নাম ‘বারকি’।
নদী-হাওর-বিল ইচ্ছে হলে সুলতানা কামাল খনন করতেই পারেন। তার প্রয়োজনকে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু যে যাদুকাটা কিংবা ধোপাজান নদী বালু-পাথরখেকোদের বালু-পাথর উত্তোলনের অত্যাচারে প্রয়োজনেরও অধিকমাত্রায় গভীর হয়ে গিয়ে অতলান্তিকতার মাত্র অর্জন করেছে সেটাকে আবার খনন করার তালিকায় যুক্ত করে বালু-পাথর-লুটেরাদের মওকা করে দেওয়া কেন? জানা কথা এইটুকু বাহানা অথবা ফাঁক ব্যবহার করে তারা যাদুকাটা-ধোপাজান নদীতে বালু-পাথর লুটপাটের সুযোগ বাগিয়ে নেবে সরকারের কাছ থেকে। তখন সুলতানা কামাল বা শরীফ জামিলের জনকল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার আন্দোলন প্রকৃতপ্রস্তাবে মাঠে মারা যাবে, যদিও আমাদের মনে হয় ইতোমধ্যে তাঁরা দুজনে মনজিলে মকসুদে পৌঁছে যাবেন এবং জনগণ যথারীতি বিপর্যয়ের সম্মুখিন হবেন বাস্তবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com