তাহিরপুর সীমান্তের টেকেরঘাট খনিপ্রকল্প এলাকাটি ২০১৭ সনে শহীদ সিরাজের নামে নামকরণ করে লেকের চারদিকে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গানোসহ পর্যটকদের জন্য ‘শহীদ সিরাজ রেস্ট হাউস’ নির্মাণ করা হয় । ২০১৮ সনে বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির একটি অনুষ্ঠান হয় শহীদ সিরাজ লেকের পাড়ে। এই সুবাদে ‘ট্যুরিজম বোর্ডৎ শহীদ সিরাজ লেকে ‘ইত্যাদি পয়েন্ট’ উল্লেখ করে রড সিমেন্ট ইট দিয়ে স্থায়ী ফলক নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে গত কয়েকদিন ধরে। অবকাঠামো দৃশ্যমান হলে গণপ্রতিবাদের মুখে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত বৃহ¯পতিবার (১৮ জনুয়ারি ২০২৪) বিকেলে ফলকটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হয়।
আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘ইত্যাদি পয়েন্ট’ নামাঙ্কিত ফলক ভাঙার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অভিনন্দিত করছি এবং সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তি রক্ষায় তাৎক্ষণিক তৎপরতা পরিচালনার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জ্ঞাপন করছি।
১৯৭১ সালে জামালগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করতে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্র সাচনাবাজারে আহত হয়ে ট্যাকেরঘাটে নীত হওয়ার সময় পথিমধ্যে সিরাজুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধোত্তরকালে এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার অবদানকে সম্মান জানিয়ে সাচনাবাজারের নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু ১৯৭৫ সালের রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা সিরাজগঞ্জ নামটি পাল্টে পূর্বনামটিকে পুনর্বহাল করে। এমন মুক্তিযুদ্ধের স্মারকাঙ্কিত নাম পরিবর্তনের সাংস্কৃতিক কর্মকা- ১৯৭৫-এর পর থেকেই অব্যাহত আছে। তার উদাহরণ দিয়ে লেখার বহর বাড়াতে চাই না। কেবল বলি, এই ধরনের জাতীয় চেতনাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধচেতনার পরিপন্থী নামপরিবর্তন বা নামকরণের কর্মক্রিয়া প্রকৃতপ্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধের ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র – দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ভাবাদর্শগত ষড়যন্ত্র।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত স্থান-স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের মহিমাকে মুছে দেওয়ার এইরূপ ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে, যা আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
বিদগ্ধমহল মনে করেন, এইরূপ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কাজকর্মের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিবিশেষ ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির সম্মুখিন করা একটি জাতীয় কর্তব্য, যে-কর্তব্য অবহেলিত হলে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহিমা খর্বিত হয়ে জাতিগতভাবে আমরা হীন ও নিচ বলে পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত হবো, বিশ্বসভায় গর্ব করার মতো আমাদের কীছু থাকবে না।