স্টাফ রিপোর্টার ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সিংরাঘাট হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসন করে দ্রুত বোরো চাষাবাদের সুযোগ করে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। শুক্রবার বিকেলে হাওরপাড়ের গ্রাম খিরদিপুরে ক্ষুব্ধ কৃষকরা প্রতিবাদ জানান। তারা চলতি সপ্তাহের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ করে না দিলে এই হাওরের প্রায় ১২০ হেক্টর জমির বোরো ক্ষেত পতিত থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মানববন্ধনে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও যোগ দেন।
মানববন্ধন পরবর্তী ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত পথসভায় কৃষকরা জানান, সিংরাঘাট হাওরটিতে বারোকুড়ি, বেলডোবা, শাহপুর, খিরদিরপুর, লখা, নয়া বারুঙ্কা, শান্তিপুরসহ ৮টি গ্রামের প্রায় ১২০ হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। বারোকুড়ি গ্রামের ভেতর দিয়ে সরু একটি খাল দিয়ে এই পানি নিষ্কাষিত হয়। খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি স্লুইসগেট নির্মাণ করেছিল। বর্তমানে পলি পড়ে খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। ফলে থেমে আছে হাওরের পানি। যার কারণে কৃষকরা হাওরটির নিচের অংশের ক্ষেত করতে পারছেনা। বক্তারা আরো জানান, বোরো ক্ষেত লাগানোর মওসুম এই সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে। তারা বিভিন্ন দফতরে গত ১৫ দিন ধরে আবেদন-নিবেদন করেও কিছু করতে পারছেন না। সময় চলে গেলে হাওরের ক্ষেত পতিত থাকবে এবং কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা জানান।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শফিউল ইসলাম বলেন, সামান্য টাকা হলেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাবে। এলাকার কৃষকরা সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করলেও কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা। অথচ এই হাওরটিতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ধান হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পানি নিষ্কাশন করা না গেলে হাওর পতিত থাকবে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শাহপুর গ্রামের কৃষকের সন্তান ও গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাবলু আজাদ বলেন, আমাদের আবেদনটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছে। অথচ এক-দেড় লাখ টাকা হলেই সমস্যার সাময়িক সমাধান করে হাজারো কৃষকদের ক্ষেত সুযোগ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেনা। আমি লিখিত আবেদন করেছি। ইউএনও, ডিসি, পাউবো, কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেও বরাদ্দ নেই অজুহাতে কেউ কিছু করতে চাচ্ছেনা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় খিরদিরপুর গ্রামের কৃষক নূর আহমদ বলেন, নালার সামান্য মাটি সরিয়ে দিলে আমরা ক্ষেত করতে পারতাম। এই ক্ষেত করেই সংসার চালাই। এখন জলাবদ্ধতার জন্য চারা রোপণ করতে না পারলে আমাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে।
মানববন্ধনে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান, ইউপি সদস্য মন্তোষ দাসও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মানববন্ধনের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান। তিনি স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, আমি শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছি। পানি নিষ্কাশনের নালাটি ভরাট হয়ে গেছে। তবে আমরা কাল-পরশুর মধ্যে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এবার পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করাবো।