বিশেষ প্রতিনিধি ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সিংরাঘাট হাওরের ১২০ হেক্টর বোরো জমি জলাবদ্ধতার কারণে আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। এতে ৮টি গ্রামের প্রায় হাজারো কৃষক বিপাকে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে হাটাহাটি করেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারছেন না কৃষকরা। বিভিন্ন দফতরে ফাইল চালাচালি করতে গিয়েই বোরো মওসুমের ধান লাগানোর সময় চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে ১২০ হেক্টর জমি অনাবাদী থাকলে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বোরো ধান থেকে বঞ্চিত হবেন কৃষক।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংরাঘাট হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য বারোকুড়ি গ্রামের খালে একটি স্লুইস গেট রয়েছে। এই খালের মাধ্যমে আবুয়া নদীতে এসে হাওরের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্লুইস গেটের মুখ পলি পরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। হাওরটিতে বারোকুড়ি, বেলডোবা, শাহপুর, খিরদিরপুর, লখা, নয়া বারুঙ্কা, শান্তিপুরসহ ৮টি গ্রামের প্রায় ১২০ হেক্টর বোরো জমি রয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে এই হাওরসহ জেলার অন্যান্য হাওরের প্রায় ৮৫ ভাগ জমিতে ধান রোপণের কাজ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সিংরাঘাট হাওরের পানি নিষ্কাশনের নালাটি খনন করে না দেওয়ায় হাওরের পানি সরছেনা। ফলে হাওরে ধান লাগাতে পারছেন না অন্তত ১ হাজার কৃষক। জমিতে ধান লাগাতে না পারায় তীব্র শীতে রোপণের উপযুক্ত বীজগাছও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫-২০ দিন আগে এলাকার কৃষক দিলশাদ মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি লিখিত আবেদনও দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় কৃষকদের এই উদ্বিগ্ন অবস্থা প্রত্যক্ষ করে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র বাবলু আজাদ পানি নিষ্কাশনের জন্য উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানান। এতে কাজ না হওয়ায় তিনি গত ১৪ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/কৃষি কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। তারা বিষয়টি দ্রুত সুরাহার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে নোট লিখে আবেদন জানান। পরদিন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মফিজুর রহমান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেন। কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় বাবলু আজাদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও কৃষকদের নিয়ে দেখা করে তাদের উদ্বেগের কথা জানান এবং দ্রুত পানি নিষ্কাশনের অনুরোধ জানান। কিন্তু বাজেটের অজুহাত দিয়ে কেউই পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিচ্ছেনা বলে জানান কৃষকরা। ফলে মওসুম শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এই জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবেনা বলে জানান কৃষকরা। এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে এই জমি পতিত থাকলে প্রায় ২৫ কোটি টাকার বোরো ফসল উৎপাদন হবেনা।
কৃষকদের পক্ষে আবেদনকারী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বাবলু আজাদ বলেন, এলাকার প্রায় ১ হাজার কৃষকের জমি অনাবাদী থেকে যাবে যদি এই সপ্তাহে পানি নিষ্কাশন না করা হয়। আমি লিখিত আবেদন দিয়ে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দেখা করেও কোন ব্যবস্থা করতে পারছি না। বরাদ্দ নেই এই দোহাই দিয়ে ফাইল চালাচালি করেই সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অথচ মাত্র ৫০০ মিটার জায়গা শ্রমিক লাগিয়ে ১-২ লাখ টাকা খরচ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
শাহপুর গ্রামের কৃষক দিলশাদ মিয়া বলেন, আমি ১৫-২০ দিন আগে আবেদন করেছিলাম। কেউ পাত্তা দেয়নি। ক্ষেতের পানি না সরলে আমাদের প্রায় এক হাজার কৃষককে না খেয়ে থাকতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য সিংরাঘাট হাওরের বেশকিছু জমি চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষক। এই আবেদন পাওয়ার পর আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসিতে সাময়িক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতে লিখেছি। আমার কাছে খননের কোন বরাদ্দ না থাকায় আমার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, খনন করে দেওয়ার জন্য আমাদের কোন বরাদ্দ নেই। আমরা বিএডিসিকে বলেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ১২০ হেক্টর জমি অনেক বেশি। এতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই জমি কোনভাবেই পতিত থাকতে পারেনা। আমি উপজেলা কৃষি অফিসারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।