1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

উপজেলা নির্বাচনের আগেই সংকট নিরসন করতে চায় আ.লীগ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৪

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
গত ৭ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আগামী মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা। তবে সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশিরভাগই ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে সারা দেশে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিভক্তি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এটি নিরসন করাই এখন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আগামী মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ফলে এ নির্বাচনের আগে এটি নিরসন করতে না পারলে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে দলটিকে। তবে দলটি দাবি করছে, আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, নির্বাচনের আগেই তা নিরসন করা সম্ভব হবে।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে। আর আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগে গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থী দিয়েছিল। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাই নির্বাচনি নতুন রণকৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। তবে এ নির্বাচনি রণকৌশলের কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
এ বিভক্তি হওয়ার কারণে ইতিমধ্যে কোথাও কোথাও সংঘাত বা সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংকট দিন যত যাবে ততই বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই দল এ সংকট নিরসনে কাজ করবে। ইতিমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সংকট নিরসনে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলটির হাইকমান্ড থেকে।
এ ছাড়া সারা দেশে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এসব সাংগঠনিক জেলার নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি দলটির ৮টি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিম রয়েছে। সাংগঠনিক স¤পাদকদেরও এ সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের সঙ্গে সশরীরে বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে চিঠি দেওয়া হবে, যারা দ্বন্দ্বে জড়াবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত সোমবার আওয়ামী লীগের যৌথসভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন শেষে নিজেদের মধ্যে দোষারোপ ও অপরাধ খোঁজা বন্ধ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করেছে, কেউ জয়ী হয়েছে, কেউ পারেনি। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করব, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করা বা কার কী অপরাধ, সেগুলো খুঁজে বেড়ানো বন্ধ করতে হবে। সবাইকে আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় দলটির সাধারণ স¤পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পাতানো ছিল না। বিরোধীরা নির্বাচন বয়কট করায় নতুন রণকৌশল নিতে হয়েছে। যেখানে জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য বড় অংশ। জনগণের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এ রণকৌশল নিতে হয়েছে, যার সোনালি ফসল আমরা ঘরে তুলেছি। দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে এখন অনেকে অনেক কথাই বলবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার লক্ষ্যে। এতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে গিয়ে দলের তৃণমূল পর্যায়ে নৌকা ও স্বতন্ত্র এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এখন দ্বিধাবিভক্ত। সামনে দলের এ দ্বিধাবিভক্তি মেটানোই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এখন দলের জন্য বড় একটি আশঙ্কার জায়গা। এটি মেটানো না গেলে ভবিষ্যতে দলকে এর খেসারত দিতে হবে। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগে এই সংকট নিরসন করতে না পারলে এর পরিণতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত এটি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব তার জন্য ব্যবস্থা নিতে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, এবারের নির্বাচনি পরিবেশ ভালো ছিল। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে যে অবস্থা দেখা দিয়েছে, তা কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়। এ নিয়ে দল বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ এ কোন্দল চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। এটা আরও বাড়বে। এটি এখনই নিরসন করা জরুরি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কতটুকু পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে কিছু কিছু জায়গায় বিতর্ক থাকলেও নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে। তবে নির্বাচন-পরবর্তী সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যদিও এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দল সক্ষম। ইতিমধ্যে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ শুরু করছেন। তবে নির্বাচনকে যেন কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, তার জন্য শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ কারণে নির্বাচন উৎসবমুখর হয়েছে। যদিও দলের তৃণমূল পর্যায়ে কিছুটা বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছিলেন। এরা সবাই আওয়ামী লীগের। হয়তো যারা প্রার্থী ছিলেন তারা মিলে যাবেন। কিন্তু এ প্রার্থীদের সমর্থকরা মিলে যাওয়াটা সময়সাপেক্ষ। তবে সশরীরে সবাইকে নিয়ে বসলে হয়তো একটা সমাধান বের করা যাবে। কারণ সামনাসামনি বসলে রাগ কমে যায়। আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে। কারণ এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচন হয়ে গেছে। কেউ হেরেছেন, কেউ জিতেছেন। এটা নিয়ে আর কোনো সংঘাত চাই না। তবে নেত্রী একবার বললে যা হবে, আমরা দশবার বললেও তা হবে না। আগামী উপজেলা নির্বাচনের আগেই আমরা বিষয়টি সমাধান করে ফেলতে পারব।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল পর্যায়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ৮ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক টিম রয়েছে। তারাও কাজ করছেন। আশা করছি, শিগগিরই এটার সমাধান হয়ে যাবে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এর প্রভাব তেমন পড়বে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স¤পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় দলের তৃণমূল পর্যায়ে কিছুটা বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এই সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এটি সামাল দেওয়া দলের জন্য একটু চ্যালেঞ্জ। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও নির্দেশনা দিয়েছেন। আশা করছি আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই এর সমাধান হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচন উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে দলীয় প্রতীক নৌকা প্রার্থীর পাশাপাশি দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত ২৬৫ জন প্রার্থী অংশ নেন। আর সারা দেশের বিভিন্ন আসনে ২৬৯ জন আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এরই প্রেক্ষিতে সারা দেশে ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে এসেছেন। সঙ্গত কারণে নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকি চলছে। নির্বাচন-পরবর্তী সংঘাতে প্রাণহানিও হয়েছে। এটি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির হাইকমান্ড চিন্তায় রয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com