সুনামগঞ্জের হওরাঞ্চলে বোরো ধানের রোপণপর্বের চাষাবাদ বলা যায় শেষ হয়ে এসেছে। অথচ এখনও ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজের কোনও অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কাবিটা নীতিমালা মোতাবেক ১৫ ডিসেম্বরে সকল বাঁধনির্মাণের কাজ শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারির ভেতরে শেষ হওয়ার কথা। কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পন্ন হলেও কাজ সম্পন্ন করতে গড়িমসি চলছে এবং ইতোমধ্যে একমাস সময় অতিক্রান্ত হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য আজ ১৬ জানুয়ারি। পাউবো’র তথ্যানুসারে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১০ ভাগ। এমতাবস্থায় কৃষকদের উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
প্রতি বছরই এমনটা হয়। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সময়মতো কোনও বছরই কাজ হয় না এবং কোনও না কোনও উপায়ে কাজ বিলম্বিত করে ও কাজের মান কমিয়ে দিয়ে পিআইসি ও পিআইসির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের চক্র গড়ে তোলে সুকৌশলে কাঠামোগত আত্মসাত চালানো হয়। এই আত্মসাতের কাজ-প্রবণতাটি কেবল হাওররক্ষা বাঁধনির্মাণের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে না, এই কাজ-প্রবণতাটি ফসল কেটে ঘরে তোলার পর বোরো ধানের ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট হয়ে বোরো ফসলের সামগ্রিক উৎপাদনক্রিয়াটিকে উৎপাদক কৃষকের জন্য অনিবার্য লোকসানের আর্থনীতিক একটি প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত করে, প্রকারান্তরে বোরো ধানের উৎপাদনের পদ্ধতিটি হয়ে পড়ে ফড়িয়াদের জন্যে লাভজনক একটি আর্থনীতিক পদ্ধতি এবং উৎপাদক কৃষকের জন্যে লোকসানের। তাই সামগ্রিক বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, হাওরাঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি প্রচ্ছন্ন কাঠামোগত সহিংসতা বিরাজ করছে। এই আর্থসামাজিক সহিংসতা থেকে হাওরাঞ্চলকে বাঁচাতে হবে, তা না হলে যতই উন্নয়নের জোয়ারে হাওরাঞ্চলকে ভাসিয়ে দেওয়া হোক না কেন, সে-উন্নয়নের স্বার্থ-সুবিধা উৎপাদক কৃষকের ভাগে না গিয়ে সুবিধা ভোগী ফড়িয়াদের ভা-ারে গিয়ে জমা হবে।
বিদগ্ধমহলের ধারণা, এবারের নির্বাচনে জনবান্ধব রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব সুনামগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একজোট হয়ে এই বিষয়টিরÑ যে-বিষয়টিকে ‘কাঠামোগত সহিংসতা’ বলা হচ্ছেÑ নিরসনে অবদান রাখতে পারেন এবং ভুলে গেলে চলবে না, হাওরাঞ্চলের কৃষকরা উক্ত কাঠামোগত সহিংসতা দূর হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।