সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রার্থীদের খোঁজখবর না নেওয়া, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা না দেওয়াসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে বিক্ষোভে নামে জাপার একটি অংশ।
একাংশের চলমান বিদ্রোহে দলে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দলটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের আহ্বান ছাড়া কেউ যেন ঢাকায় কোনো বৈঠকে অংশ না নেন। এছাড়া জাপা চেয়ারম্যানের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা পার্টির কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দল থেকে ইতোমধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বহিষ্কারের তালিকায় রয়েছে আরও অন্তত ১০ কেন্দ্রীয় নেতার নাম। সব মিলিয়ে আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি। বর্তমানে জাপায় চারটি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে একটি জি এম কাদেরের নেতৃত্বে। অন্যটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। আরেক পক্ষে আছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আরেকটি পক্ষ তৈরির পথে।
নির্বাচন কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়া নেতারা বলছেন, তারা ইতোমধ্যে সারা দেশের জাপার প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনে যারা হেরেছেন, তারাও এই বৈঠকে যোগ দেবেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে জাপা গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তারা আরও জানান, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাইরে কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা বৈঠকে অংশ নেবেন। পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু।
জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এই দল বিক্রি হয়ে গেছে। দলের কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। গরু-ছাগলের মতো জাপা একটি খামারে পরিণত হয়েছে।
নির্বাচনের পর জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে গত বুধবার দলের বনানী কার্যালয় ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। পুলিশি বাধায় তারা ভেতরে ঢুকতে না পেরে বাইরে সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমি বহিষ্কারের ভয় পাই না। সবাইকে ডেকেছি। কথা শুনব। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
এদিকে দলের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে জাপা। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আহ্বান ছাড়া অন্য কারও আহ্বানে কেউ কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ না করতে কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে দলটি।
দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম দপ্তর স¤পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পার্টির সব স্তরের নেতাদের কোনো কুচক্রী মহলের অবৈধ ও অসাংগঠনিক প্ররোচনায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করা হলো।
এমন ঘটনার মধ্যে শনিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানর বনানীস্থ কার্যালয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের বলেন, পার্টির বিরুদ্ধে যারাই ষড়যন্ত্র করেছে, তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। আবারও যারা ষড়যন্ত্র করবে তারাও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। যারা নির্বাচনই করেনি তারাও নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। আসলে, জাতীয় পার্টিকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করতেই তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। যারা জাতীয় পার্টির কেউ না তাদের সাথেও বৈঠক করছে ষড়যন্ত্রকারীরা। যাদের এখতিয়ার নেই তারা পার্টির নামে সভা ডেকে জাতীয় পার্টির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এরশাদের সৈনিকেরা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। যারা দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।