মো.শাহজাহান মিয়া :
হাওরাঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। সূর্যের দেখা না পাওয়া আর তীব্র বাতাসে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। অপরদিকে দুর্ভোগ বেড়েছে হাওরাঞ্চলের জনজীবনে। শীতের তীব্রতায় বোরো আবাদসহ মানুষের অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে শীতজনিত রোগও। হাট-বাজারে কমে গেছে লোক সমাগম।
তীব্র শীতে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুর শ্রমজীবী মানুষজন। তারা না পারছেন কাজে যেতে আবার কাজে না গেলেও অনেকের না খেয়ে থাকতে হবে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে কাজে যাচ্ছেন। বোরো জমির পানিতে নেমে ধান রোপণসহ কৃষি কাজ করছেন কৃষক-শ্রমিকরা। জেলেরা শীতল পানিতে নেমে ধরছেন মাছ।
এদিকে, ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাস শীতকে আরো উস্কে দিয়েছে। ফলে সর্বত্র বেড়েছে শীতের মাত্রা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হতে চাইছেন না। শুধু জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষজন হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। এছাড়া যাদের পর্যাপ্ত শীত নিবারণের গরম কাপড় নেই, সেই দরিদ্র পরিবারের মানুষজন শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।
হাওরপাড়ের বাসিন্দারা জানান, প্রকৃতিও দরিদ্র মানুষদের বিরুদ্ধাচরণ করে। বন্যা হলেও সবার আগে গরিবদের বাড়িঘর তলিয়ে যায়। ঝড় হলেও সবার আগে গরিবদের কুঁড়েঘর উড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রচন্ড শীতেও গরিব মানুষগুলো কষ্ট পায়। যাদের অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কাজে গেলে খাওয়া, না হলে উপোষ থাকা। প্রতিদিন অভাব নামের দানবের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা। তার উপর প্রকৃতির নিঠুর আচরণ মোকাবেলা করেই বেঁচে আছেন তারা। যারা কখনোই পরিবারের সকল সদস্যের চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
গতকাল শনিবার দুপুরে বেশ কয়েকদিন পর সূর্যের এক চিলতে দেখা মিলে। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে।
জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা নৃপেন্দ্র দাস, গৌর দাস, অনুকূল দাসসহ কয়েকজন জেলে বলেন, এই শীতে খাল, বিল ও নদীর শীতল পানিতে নেমে জাল দিয়ে মাছ ধরা যে কি কষ্টের কাউকে তা বুঝাতে পারবো না। মাছ না ধরলে সংসার চলবে না। তাই অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানিতে নেমে মাছ ধরছি।
শহিদুল ইসলাম, বুরহান উদ্দিন, এনামুল হক সহ কয়েকজন কৃষি কাজের শ্রমিক বলেন, ভোরে কাজে যেতে মন চায় না। এরপরও মনকে শক্ত করে অন্যের জমি রোপণ করতে যেতে হয়। না হলে অভাবের সংসার চলবে না।
আবদুল্লাহ মিয়া, শফিক আলী, এলাইছ মিয়াসহ কয়েকজন দিনমজুর জানান, কাজে গিয়ে টাকা রোজগার করে আনলে বিকেলে বাজার খরচ করবো। না হলে উপোষ থাকবো বউ-বাচ্চাকে নিয়ে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, বন্যা হলেও আগে আমাদের বাড়ি ডুবে, ঝড়-তুফানেও আমাদের ঘর উড়ে, শীতেও আমাদের কষ্ট। এই হচ্ছে আমাদের জীবন। এটা নতুন কিছু নয়।
তবে সচেতন মহলের অনেকে জানান, জীবন সংগ্রামী শ্রমজীবী দরিদ্র পরিবারের মানুষজন কেমন আছেন, তাদের খোঁজ-খবর রাখা উচিত।