1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বদল

  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪

শামস শামীম ::
পরীক্ষার জায়গা ও লোক নেই এই অজুহাতে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সেকশন অফিসার, অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটরসহ চারটি পদে ৩০০ জনের পরীক্ষা নেওয়া হবে গাজীপুরে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ৩১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জি.এম. শহিদুল আলম কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রবেশপত্রে এই নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এর প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার জেলার সুধীজনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আবু নঈম শেখ এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছেন। এই প্রতিবেদককে রাত ৯টা ২০ মিনিটে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সামন্তবাদী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সুধীজন। তারা ক্যারিক্যাল পদগুলোতে স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়ার জোরালো দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৪ জুন ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে থাকার শর্তে চার বছরের জন্য উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন প্রফেসর ড. মো. আবু নঈম শেখ। তিনি ডুয়েটে গণিত বিভাগের প্রধান ছিলেন। তার একক ইচ্ছেতেই সুনামগঞ্জের বদলে গাজীপুরে তার পুরনো কর্মস্থলে সুবিপ্রবি’র নিয়োগ পরীক্ষার স্থান নির্ধারণ ও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল আগামী ১৯ জানুয়ারি। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, সুধীজনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের লোকজন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদও করেন। অভিযোগ ওঠে স্থানীয়দের বঞ্চিত করার পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি করার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে গাজীপুর থেকে সুনামগঞ্জে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানান জেলাবাসী।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন অনুমোদন দেয় মন্ত্রীসভা। ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাস হয়। ২০২০ সালের ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৪৭তম বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২২ সালের ১৪জুন ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে থাকার শর্তে চার বছরের জন্য উপাচার্য নিয়োগ পান ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)-এর গণিত বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবু নঈম শেখ। ২০২২ সালের ৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জি.এম. শহিদুল আলমকে রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. হিমায়েত মিয়াকে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) (চুক্তিভিত্তিক) হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী (এডহক) ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করেন। গত বছর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত পদগুলি পূরণের লক্ষ্যে গত ৮ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদদের ব্যস্ততার সময়ে ইচ্ছে করেই এই সময় নিয়োগ প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর বিভিন্ন পদে হাজারের উপর আবেদন পড়ে। এর মধ্যে বাছাই করে অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর পদে ২২৮ জনসহ প্রশাসনিক ও সেকশন অফিসার পদে আরো প্রায় ৭২ জনসহ সর্বমোট চারটি পদে প্রায় ৩০০ জনের লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা হয় আগামী ১৯ জানুয়ারি। পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রবেশপত্রে উল্লেখ করা হয় ভিসির পুরনো কর্মস্থল ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর। এ ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ পেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্থানীয় পেশাজীবী সংগঠনের লোকজনও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা জোর দাবি জানান এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের।
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশে যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাতে ক্ল্যারিক্যাল পদে প্রায় ৯০ ভাগ স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সুনামগঞ্জকে শুরু থেকেই বঞ্চিত করতে বাছাইতে সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ প্রার্থীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। প্রকৌশলী, স্থপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে বাইরের জেলার অনভিজ্ঞদের গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রার ও ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত দুই অধ্যাপককে। ঢাকায় লিয়াজো অফিস নিয়ে গোপনে এসব কারবার চলছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন কর্মসূচি না নেওয়ায় ক্ষোভও আছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বলেন, হাওরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন। কিন্তু শুরুতেই আমাদের জেলার মানুষকে বঞ্চিত করে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা ভিসি সাহেব তার পুরনো কর্মস্থল গাজীপুরে নেয়ার উদ্যোগ নেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে স্থানীয়দের বঞ্চিত করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গাজীপুরে পরীক্ষাকেন্দ্র নেওয়া হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, আমাদেরকে জননেত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছেন। কার্যক্রমও এগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশেই মূলত অফিস সহকারীর পদগুলো স্থানীয়দের মাধ্যমেই পূরণ হয়। এখন শুনলাম এই পদগুলোর পরীক্ষা সুনামগঞ্জের বদলে ভিসি সাহেব তার প্রাক্তন প্রতিষ্ঠানে নিবেন। এটা রহস্যজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম। সুনামগঞ্জকে শুধু বঞ্চিত করাই নয়, এর পিছনে বড় রহস্য আছে বলে মনে করি। এখন শুনলাম তিনি প্রতিবাদের মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছেন। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনামগঞ্জের স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট, ১৬ ডিসেম্বর এবং ১০ জানুয়ারির মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে কোনো একাডেমিক কর্মসূচি না থাকাটা, ‘ভিশন ২০৪১: স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিয়ে এবং অন্যান্য পলিসি ইস্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলেকচুয়াল ভিসিবিলিটি না থাকাটা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতির সাথে যায় না। একজন কমিউনিটি স্টেকহোল্ডার এবং শিক্ষাবিদ হিসেবে ড. তালুকদার আরো বলেন, ভিসি সাহেবের সাথে আমার সম্পর্কটা ভাল, কিন্তু কমিউনিটি স্টেকহোল্ডার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নে আমার কোনো পরামর্শ নিতে তিনি রাজিনা! আমি বলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলেক্চুয়াল ভিসিবিলিটি, স্বচ্ছতা ও স্টেকহোল্ডার সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য, তাতে ভিসি সাহেব বলেন, “আমি আমার মতো কাজ করি, আপনি এই মাটির সন্তান, আপনি চাইলে পরেরবার প্রধানমন্ত্রীকে বলে আপনি এসে আপনার মতো কমিউনিটি স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে কাজ করুন।”
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জি.এম. শহিদুল আলম বলেন, সুনামগঞ্জে পরীক্ষা নেওয়ার মতো জায়গা আমরা পাইনি। পরীক্ষা নেওয়ার যথেষ্ট জায়গা নাই। লোকবলও আমাদের নেই। তাই ঢাকাস্থ আমাদের লিয়াজো অফিসের কাছে গাজীপুরে অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর পদে ২২৮ জনের পরীক্ষা নেওয়ার কথা। তিনি আরো বলেন, নিয়োগে স্থানীয় বলতে কিছু নেই। যোগ্যদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার খায়রুল হুদা চপল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. মো. আবু নঈম শেখ বলেন, আমি চাচ্ছিলাম স্বচ্ছতার সাথে পরীক্ষা নিতে। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আমি সুনামগঞ্জেই পরীক্ষা নেব। ফোন করে পরীক্ষার্থীদের পরবর্তী তারিখ বলে দেওয়া হবে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com