1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সুনামগঞ্জ-২ : থামানো যায়নি জয়ার জয়রথ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ::
হাওর-ভাটির দুর্গম জনপদ দিরাই-শাল্লা উপজেলা। নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ-২। গত অর্ধ শতাব্দী ধরে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই আসনের সাতবারের সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাকে এই আসনের মানুষ সাতবার এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। পাশের আজমিরিগঞ্জ আসন থেকে আরেকবার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। দেশের প্রথম রেলমন্ত্রীও ছিলেন ছিলেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা রাজনীতির হাল ধরেন। বাংলাসাহিত্যের গবেষক ড. জয়া সেনগুপ্তাকে আড়ালে থেকে পরিচালনা করেন তার ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত। ড. জয়া সেনগুপ্তা টানা দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে নির্বাচনী এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অসমাপ্ত উন্নয়নকাজও এগিয়ে নিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবার ড. জয়া সেনকে মনোনয়ন না দিলে তিনি এলাকাবাসীর চাপে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। তার পক্ষে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটাররা দাঁড়ান। অবশেষে শক্তিশালী প্রার্থী পুলিশ প্রধানের ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আল আমিন চৌধুরীকে পরাজিত করে কাঁচি প্রতীকে বিজয়ের মালা পরেন ড. জয়া সেনগুপ্তা। তবে জয় নিয়ে ঘরে ফিরতে তাকে এই বৃদ্ধ বয়সেও ঘাম ঝরাতে হয়েছে। জাল ভোট, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখিয়েও তার জয়রথ থামানো যায়নি বলে জানিয়েছেন শুভাকাক্সক্ষীরা।
সরেজমিনে ভোটের দিন (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০.২৫ মিনিটে দিরাই উপজেলা শরিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নারীদের বুথে ভোটারের লাইন। পুরুষরা বিচ্ছিন্নভাবে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরে নৌকার প্রার্থীর ব্যাজধারী সমর্থকদের দেখা গেল। তারা কেন্দ্রের ভিতরে যারা ঢুকছেন তাদেরকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ভিতরে প্রবেশ করে দেখা গেল শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে। প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানালেন নির্বিঘেœ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন।
দিরাই পৌরসভার রাধানগর নির্মাণাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ১০.৪৫ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারের দীর্ঘ লাইন। এখানেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন নৌকার ব্যাজধারী সমর্থকরা। এই অবস্থা দেখে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটেরে নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এই উপজেলার ধনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ১১.২০ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, নৌকার ব্যাজধারী চ-িপুর গ্রামের স্বাধীন মিয়া মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা দুলাল মিয়া প্রকাশ্যে প্রতিটি বুথে অবাধে যাতায়াত করছেন। তাদেরকে বাধা দিয়েও পারছেন না সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার। সড়কে দাঁড়িয়ে স্বাধীন মেম্বার ও দুলাল যারা ভোট দিতে আসছেন তাদেরকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর দেখা গেল স্বাধীন মেম্বার একটি অনুমোদনহীন মোটরসাইকেল নিয়ে কাশিপুরের দিকে যাচ্ছেন।
বেলা সাড়ে ১২টায় শাল্লা উপজেলার কান্দিগাঁও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, দোতলায় ভোটাররা সারিবদ্ধভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা মাসুদ জামান ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মিয়া গ-গোল না করার জন্য বাইরে দাঁড়ানো এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
শাল্লা উপজেলার চবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা জাল ভোট দিচ্ছে, বাধা দিলে ড. জয়া সেনগুপ্তার এজেন্টদের হুমকি ধমকি দিচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়ে দুপুর ১টায় এই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের চারদিকে নৌকার ব্যাজধারী সমর্থকরা হট্টগোল করছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। তারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এর মধ্যেই খবর আসে সাতগাঁও, আদিত্যপুর ভোট কেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক ভোট দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে চবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্জন চক্রবর্তীকে জানালে তিনি আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীকে ওখানে যাওয়ার আহ্বান জানান। তবে প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছেন ভোটার ও এলাকাবাসী। এভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেন গুপ্তার বিজয় কেড়ে নিতে ষড়যন্ত্র ছিল বলে মনে করেন তার সমর্থকরা।
এসময় আবার খবর আসে আটগাঁও ইউনিয়নের মীর্জাপুর ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টার সময় সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করায় দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা সন্দিপন তালুকদার সুজনকে মারধর করা হয়েছে। বিষয়টি জেনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাৎক্ষণিক সেখানে আইন শৃৃঙ্খলা বাহিনীকে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা জোরপূর্বক বিজয় ছিনিয়ে নিতে প্রচেষ্টা করলেও জনরোষে তারা টিকতে পারেনি। জনরায়ের কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দিরাই পৌরসভার শুকুরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ভোটবাক্স ছিনিয়ে নিয়েছিল তারা। পরে প্রশাসন উদ্ধার করেছে। হাতিয়া ভোট কেন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান একরারের নেতৃত্বে বন্দুক নিয়ে দখলের চেষ্টা করলে জনতার ধাওয়ায় পালিয়েছে তারা। এছাড়া রফিনগর ইউনিয়নের মীর্জাপুর, তাড়ল ইউনিয়নের নোয়াগাঁও ও উজানধল ভোট কেন্দ্রও তারা দখলের চেষ্টা করেছিল। প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও ভোটারদের সচেতনতার কারণে তারা বেশি কিছু করতে পারেনি। তবে বিভিন্ন স্থানে জাল ভোট দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছিল, হুমকি ধমকি দিয়েছিল।
শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুস সাত্তার মিয়া বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তার বিজয় কেড়ে নিতে অপচেষ্টা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। কেন্দ্র জবরদখলের চেষ্টার সঙ্গে, জাল ভোট ও এজেন্টদের হুমকি ধমকি দিয়ে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে শেষ পর্যন্ত জনতার রায়ের কাছে পাত্তা পায়নি তারা। জনগণের জয় হয়েছে।
ড. জয়া সেনগুপ্তার ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত বলেন, শাল্লার আদিত্যপুর, সাতপাড়াসহ বিভিন্ন সেন্টার দখল করতে নৌকার প্রার্থীর নির্দেশে তার সমর্থকরা রামদা নিয়ে এসেছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে তারা আমাদের লোকদের ভয় ভীতি ও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আমাদের লোকজন বাধা দেওয়ায় তাদেরকে হুমকি ধমকি দেয়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত আবারও দিরাই-শাল্লাবাসী আমাদের পরিবারকে ভালোবাসা দেখিয়েছে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আল আমিন চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি কল ধরেননি।
রবিবার রাত ১২টায় ড. জয়া সেনগুপ্তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী। ঘোষিত ফলাফলে তিনি ৬৭ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নৌকা প্রতীকে ৫৮ হাজার ৬৭২ ভোট পেয়েছেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান খন্দকার বলেন, ভোটের দিন কেন্দ্রে গোলমালের মৌখিক অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছিলাম। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি। তবে নির্বাচন নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘেœই সম্পন্ন হয়েছে।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com