জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও সুনামগঞ্জে হাওরডুবি থেকে বোরো ফসলরক্ষার্থে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর ২০২৩) থেকে এবং এ কাজে ও কাজের ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের অগ্রিম দাবি জানিয়ে রেখেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। অন্যথায় তাঁরা প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন। যদিও তাঁরা প্রতিবছরই প্রতিবাদ করেন এবং এই প্রতিবাদের ভেতর দিয়েই চোরা ¯্রােতের মতো দুর্নীতি ঠিকই বহমান থাকে। প্রতিকার চেয়েও কোনও কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যায় না।
অর্থাৎ ‘হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের কাজ’-এর সঙ্গে বহুমাত্রিক দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট থাকে, প্রতিবছর বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পরও এই দুর্নীতিকে প্রতিহত করা যায় না। অনিবার্য নিয়মের মতো দুর্নীতি হয়। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ও আন্দোলকদেরকে দুর্নীতিবাজদের কাছে পরাস্ত হতেই হয়। বিদগ্ধ মহলের ধারণা প্রশাসন, আন্দোলক ও বাঁধনির্মাতা এই তিন পক্ষের মধ্যে দুর্নীতিবন্ধ না হওয়ার অনুকূলে কোনও না কোনও অদৃশ্য রহস্যময় অনুঘটকীয় বাস্তবতা কার্যকর আছে, যে-বাস্তবতাকে প্রতিহত করা না গেলে কীছুতেই বাঁধনির্মাণ কাজে কার্যকর দুর্নীতি নির্মূল হবে না। তাঁরা মনে করেন, সমাজসাংস্থিতিক পরিসরে উদ্ভূত দুর্নীতিকে নির্মূল কারার লক্ষ্যে সর্বপ্রথমে সমাজের মানুষকে আত্মস্বার্থবিমুখ হয়ে উঠতে হবে এবং সেটা করতে হলে বর্তমান শোষণনির্ভর, মুনাফামুখি ও তেকারণে বিশেষভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী অর্থনীতিটাকে বদলে দিতে হবে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা উদ্বৃত্তমূল্য শোষণনির্ভর বলে এ সমাজে মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ সমাজমানসতা দুর্নীতির মালমসলা দিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। ভুলে গেলে চলবে না যে, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ না করলে কারও সম্পদ বৃদ্ধি পায় না। এই জন্যে কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ সম্পদসঞ্চয়ের প্রক্রিয়াকে চুরি বলে অভিহিত করেছেন। আবার এই জন্যে কথায় বলে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী।
হাওরদুর্নীতি বন্ধের যত কৌশলই গ্রহণ কার হোক না কেন শেষ পর্যন্ত হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণে দুর্নীতিপ্রবণ কার্যক্রম একেবারে পুরোপুরি কীছুতেই বন্ধ করা যাবে না, যদি না বাঁধনির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যেকেই পুরোপুরি দুর্নীতিবিরোধী হয়ে উঠেন।