বিশেষ প্রতিনিধি ::
দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পানিশমেন্ট বদলি হওয়া সুনামগঞ্জের সাবেক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান ও তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের-এর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পদায়ন, বদলিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন এলাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল। ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ করেছিলেন। এ নিয়ে পত্রিকায় এই দুই শিক্ষা কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক সংবাদও ছাপা হয়েছিল। সংবাদের পরই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সুনামগঞ্জ থেকে পানিশমেন্ট বদলি করা হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে এই দুই শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বদলি হয়ে যাওয়া একজন শিক্ষিকাকেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা-এর স্মারক নং ০০.০১.০০০০.১০৯.৩৮.০০১.২৩-১২৮৭, তারিখ: ৪ নভেম্বর ২০২৩’ স্মারক নম্বর উল্লেখ করে বলা হয়েছে- সুনামগঞ্জের প্রাথমিক (সাবেক) জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুর রহমান ও তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আবুল খায়ের নিয়ম ভেঙে শিক্ষক বদলি, পদায়ন নিয়ে কারসাজি, মাসোহারা আদায়, স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে অবৈধ সুবিধা নেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামী ১৯ ডিসেম্বর সরেজমিন তদন্ত হবে। ওইদিন সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে ওই দুই অভিযুক্ত কর্মকর্তাসহ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বদলি হওয়া শিক্ষক রোমানা আক্তারকেও উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৯ মে দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘শিক্ষকরা জিম্মি দুই কর্মকর্তার কাছে’ এবং ৩০ মে ‘দুর্গম এলাকা বঞ্চিত, অন্যত্র অতিরিক্ত’ শিরোনামে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সংবাদের জেরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুর রহমানকে গত ১৪ জুন খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পানিশমেন্ট বদলির আদেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে দুর্নীতির কারণে খাগড়াছড়িতে সংশ্লিষ্টরা তাকে নিতে না চাওয়ায় পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়। এসএম আব্দুর রহমান গত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ভাইভা পরীক্ষায় উৎকোচ গ্রহণ, পদায়নের জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে পছন্দের স্কুলে পদায়ন, দুর্গম ও শিক্ষকশূন্য বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন না দিয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে উন্নত যোগাযোগের বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও পরিদর্শনসহ শিক্ষক বদলির সময়ে অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ চক্রের সঙ্গে আতাত করে নিয়ম বহির্ভূত বদলি বাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আবুল খায়ের অন্ধ হওয়ার পরও গত দুই বছর ধরে শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি শিক্ষকদের জিম্মি করে পরিদর্শনের নামে মাসোহারা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি উপজেলা সমন্বয় সভায় তার বিরুদ্ধে শিক্ষকরা এসব তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চাকুরিবিধি অনুসারে একজন কর্মকর্তার আয়ন-ব্যয়ন অন্ধ হলে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব জামান বলেন, সিলেট ডিডি অফিস সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার ও তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের সরেজমিন তদন্তের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ ডিসেম্বর আমাদের জেলা অফিসে তদন্তকাজ সম্পন্নের জন্য তাদেরকে উপস্থিত হতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন।