স্টাফ রিপোর্টার ::
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মুরারী চাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের সম্প্রতি নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ, অপপ্রচার এবং সুনাম নষ্টের নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যালয়ের ৫টি পদে নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা স্বচ্ছ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে স¤পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিজেই বহাল থাকতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য জানান, গত ১ ডিসেম্বর মুরারী চাঁদ উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, ক¤িপউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, নৈশপ্রহরী এবং প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৫ সদস্যবিশিষ্ট নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীবন রায় নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের স্ব স্ব পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রধান শিক্ষক পদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মো. শাহীন উদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণাও দেন। ঘোষণা দেয়ার পর প্রধান শিক্ষক পদে নিজে বহাল থাকতে কমিটির ২-১ জন সদস্যের সাথে কথা বলে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু নিয়োগ বোর্ড তা মেনে নেয়নি।
গত ৪ ডিসেম্বর বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীবন রায়ের কাছ থেকে আয়-ব্যয় হিসাব, আসবাবপত্র এবং আলমিরার চাবি সমঝে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলে এক পর্যায়ে চুপিসারে তিনি বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যান এবং কাউকে কিছু না বলে অব্যাহতিপত্র টেবিলের উপর রেখে যান। উপস্থিত সদস্যগণ ভাবছিলেন হয়তো কোনো জরুরি কাজে তিনি বেরিয়ে গেছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে সভায় উপস্থিত সদস্যরা এই অব্যাহতিপত্র দেখতে পান।
ওইদিন সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীবন রায়, সাবেক প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষণ তালুকদারের সাথে মিলিত হয়ে বিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে বলে এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যান। একই সাথে কমিটির ৪ সদস্যের স্বাক্ষর বিভিন্ন কৌশলে আদায় করে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, হাওরপাড় এলাকায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় বাসিন্দা মনিন্দ্র কুমার রায় তার পিতা মুরারী চাঁদ-এর নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ৮ একর জায়গা দান করেন। স্থানীয়দের এবং মুরারী চাঁদের সহধর্মীণি সুখময়ী রায়ের অনুদানে এই জায়গার উপর বিদ্যালয় ভবন প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে মুরারী চাঁদের সহধর্মীণি সুখময়ী রায় বিদ্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এখন ওই পরিবারের উত্তরসূরী সাবেক ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন রক্ষণাবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মানে অনেক এগিয়ে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৩৩ জন। চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭৭ জন শিক্ষার্থী। পাস করে ৬৯ জন।
অভিযুক্ত সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীবন রায় বলেন, নিয়োগ কমিটিতে আমি সদস্য সচিব হিসাবে ছিলাম। নিয়োগ বৈধ বলে ঘোষণাও দিয়েছি। নিয়োগে টাকা লেনদেন হয়েছে এটা এলাকাবাসী বলছেন। যেহেতু কোনো প্রমাণ নেই, তাই টাকা লেনদেনের সত্যতাও নেই। এসব গুজব ছড়ানোয় আমি বিদ্যালয়ে পদত্যাগপত্র দিয়ে চলে এসেছি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হেকিম বলেন, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জীবন রায় সভায় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউকে না জানিয়ে চুপিসারে চলে যান এবং অব্যাহতিপত্র টেবিলে রেখে যান। কিন্তু তিনি আলমিরার চাবি, আসবাবপত্র এবং আয়-ব্যয় হিসাব বুঝিয়ে যাননি। অপরদিকে, তিনি নিয়োগ বোর্ডের শিক্ষানুরাগী সদস্য বিমল কুমার ধর, অভিভাবক সদস্য কমল দাশ, রবীন্দ্র বর্মণ ও মিনারা বেগমের স্বাক্ষর বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে নিয়োগ বাতিলের অপচেষ্টা করছেন। এতে আমাদের বিদ্যালয়ের শত বছরের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।