একজন বিদ্বান একটি উপসম্পাদকীয় প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধের শিরোনাম দিয়েছেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায়’। এই প্রত্যাশা দেশের সকল সাধারণ মানুষের। তাঁর প্রবন্ধে দেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্যে প্রাবন্ধিককে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, উন্নয়ন, বর্তমান নির্বাচন, পিটার হাস ও বিএনপির আচরণ, ইউক্রেনযুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা উপস্থিত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিয়ে যাবার বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করেছেন। তাঁর সঙ্গে একমত হওয়ার লোকের হয় তো অভাব হবে না, অনেকেই তাঁর অভিমতের সঙ্গে একমত প্রকাশ করবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি লিখেছেন, ‘পুঁজি গড়ে উঠলে নিজের স্বার্থেই পুঁজি নিজেকে পাহারা দেয়। আসে সুশাসন, সুন্দর-সুবর্ণ-সুদিন। ক্রমান্বয়ে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস পায়।’ আবার লিখেছেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস জয় হবে মানবতার, কারণ “যথা ধর্ম তথা জয়।” আর যথা হত্যা, বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস, অর্থনীতি ধ্বংসের নগ্ন চিন্তা, হিংসা, ধর্মান্ধতা তথা পরাভব, গ্লানি, পরাজয়। নষ্টদের দখলে থাকে না সমাজ-পৃথিবী। জেগে ওঠে শ্রমঘন প্রান্তিক জনতা। এই বিজয়ের মাসে দেশ প্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত সব মানুষের প্রতীতি : জয় হবে, জয় হবে , হবে জয়/মানবের তবে মাটির পৃথিবী Ñ দানবের তরে নয়।’ এইসব ইতিবাচক কথকতার সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে একমত হওয়া যায় না। পুঁজি নিজেকে পাহারা দেয় সত্য কথা, কিন্তু ‘সুশাসন, সুন্দর-সুবর্ণ-সুদিন’ প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং শোষণ-নির্যাতন বাড়ানোর জন্য কিংবা ‘ক্রমান্বয়ে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস’-এর জন্য নয়, ক্রমাগত বাড়িয়ে তোলার জন্য এবং হত্যা, বোমাবাজি, অগ্নিসন্ত্রাস, ধর্মান্ধতা, গ্লানি, পরাজয় সব কীছুই বাংলাদেশের মানুষের কেবল নয় সমগ্র পৃথিবীর মানুষের যাপিতজীবনের বাস্তবতায় বহাল আছে, অর্থাৎ নষ্টদের দখলেই আছে সমাজ-পৃথিবী। এই নষ্টরাই ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে, ফিলিস্তিনে মানুষ মারছে এবং লেখক বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন, এইসব অপকর্মের পেছনে কলকাঠি নাড়ছে পুঁজি। যখন নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীদের সম্পদের বৃদ্ধি দ্বিগুণ তিনগুণ নয়, দুই তিনশত গুণ বেড়ে যাওয়ার বয়ান প্রকাশ পায়, তার পেছনেও অন্য কারও নয় পুঁজির হাতই সচল থাকে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই নির্বাচনের কালে লেখক তাও ভুলে যান। তিনি ভুলে যান যে, বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি পুঁজিবাদে বিশ্বাস করতেন না। পুঁজিকে তিনি যুদ্ধের উৎস বলে ভাবতেন, ভাবতেন পুঁজি থাকলে পৃথিবীতে যুদ্ধ কখনওই বন্ধ হবে না। বর্তমান বাস্তবতা এই যে, সত্যদ্রষ্টা সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্যে পুঁজিবাদী উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল না। অথচ দেশ আজ পুঁজিবাদী পথেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে, সে পথেই অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ এবং সঙ্গত কারণেই সে উন্নয়নকে সোনার বাংলা নয় স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে হচ্ছে।
কোনও বিষয়ে বিকৃত বয়ান উপস্থাপন কাম্য নয়। এমন হলে তার বিরুদ্ধে বলতেই হবে। এখানে আমরা বেশি কীছু বলতে চাই না, কেবল বলতে চাই কোনও কোনও বিদ্বান বুদ্ধিজীবী যেনো এইভাবে তথাকথিত জ্ঞানগর্ভ বয়ান তৈরি করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারিত না করেন, বরং যা হচ্ছে তাই বলেন, সত্যকে প্রকাশ করেন। আমরা শেখ হাসিনার ইতিবাচক উন্নয়নকে অস্বীকার করতে চাই না। দেশের উন্নয়ন আমাদের কাম্য। তাই বলে পুঁজির ছায়াতলে ‘ক্রমান্বয়ে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস’ হচ্ছে, এই ডাহা মিথ্যাচার করার পক্ষপাতী নই।