সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
১৪ দলীয় জোটের অংশ, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে কয়টা আসন চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে, এই আলোচনা নেতাকর্মীদের মাঝে মুখ্য বিষয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
অন্যদিকে সংসদের বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইলে নেতাকর্মীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। দলের রাজনীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বনানী চেয়ারম্যানের কার্যালয়। সেখানেও নেতার্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো নয়। প্রায় প্রতিদিনই আসেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। চেয়ারম্যান গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও মহাসচিব দীর্ঘক্ষণ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। গত রোববার দুপুরে বনানী কার্যালয়ে সরেজমিন অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে। দেখা গেছে, এখানে কর্মীর চেয়ে নেতার উপস্থিতি বেশি, বিশেষ করে নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থী ও তাদের অনুসারী নেতারা রয়েছেন। ৪-৫ জন এক হয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা করছেন। তাদের আলোচনার প্রধান বিষয় আসন ভাগাভাগি। এ ছাড়া আলোচনায় স্থান পেয়েছে, কয়টা আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। কোন কোন আসন থেকে নৌকার প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। যে আসনে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে সেই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিশ্চিতভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। এখন প্রায় প্রতিদিন দুপুরে আসেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের। রোববার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে এসে ৩ তলায় সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। প্রতিদিন সকালে কার্যালয়ে এসে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। সাক্ষাৎকার দেন গণমাধ্যমকর্মীদের। সন্ধ্যার পর নেতাকর্মীদের আনাগোনা একেবারেই কমে যায়।
উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমের। তাদের ভাষ্য, বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ আসন ছেড়ে না দিলে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে লাঙ্গল প্রার্থীর জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব। অতীতে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিয়েছে। এবারও দেবে, তবে কয়টা দেবে সেটাই দেখার বিষয়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন বোঝা যাবে কতজন নৌকার প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। যেসব আসন থেকে নৌকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে সেসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিশ্চিতভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।
তারা বলছেন, জাতীয় পার্টি এবারও বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ সমঝোতার ভিত্তিতে ২৫ থেকে ৩৫টি আসন ছেড়ে দিতে পারে। না হলে বিরোধী দল হয় কীভাবে? জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে গেলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থেই জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দেবে।
উপস্থিত একাধিক তৃণমূল নেতার আক্ষেপ, সমঝোতা করে নির্বাচন না করে এককভাবে দলীয় লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলে দল উপকৃত হতো। কিন্তু সেটা অনেকেই চান না। এখন প্রায় সব নেতাই এরশাদের মতো দলটাকে ভালোবাসেন না। তারা চান সমঝোতা করে এমপি হতে। কারণ তাদের নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার যোগ্যতা নেই। তাই তারা তদবির করতে ব্যস্ত। তারা দলের কথা ভাবেন না।
বনানী থানা জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক মো. মারজান বলেন, এবারের নির্বাচন কী হবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাদের যে টাকা হয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাদের তা হয়নি, তা হলে কীভাবে ফাইট দেবে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমরা বেশি ভোট পাব। কারণ এন্টি আওয়ামী লীগের ভোট বেশি।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ১৫১ আসন পেলেই আমরা সরকার গঠন করব। তিনি বলেন, যারা জাতীয় পার্টির এমপি হবেন তাদের লাভ, কর্মীদের লাভ নেই। এলাকায় ভোট নেই, তাই তদবির করছেন। তারা ব্যক্তি চিন্তা করে। ’৯০ সাল থেকে দল করি, অনেক কিছুর সাক্ষী। ‘রওশনপন্থিরা বিতাড়িত হওয়া দলের জন্য ভালো হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির দফতর স¤পাদক রাজ্জাক বলেন, লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য দলের ২৮৮ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ার পর আপিল করে ৪ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। বাকি ৫ জনেরটা ২-৩ দিনের মধ্যে জানা যাবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম। কারণ নির্বাচনি সব কার্যক্রম বনানী অফিস থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এখানেই নেতাকর্মীরা আসছেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বগুড়া-১ আসনে দলের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা বাবু বলেন, এখন রাজনৈতিক পরিবেশটা ভালো না। কাল কী হচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না। কখন কী ঘটে বলা মুশকিল।