1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দ্রুতই কমবে পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক ::
পেঁয়াজের অস্থির বাজারে লাগাম টানতে তৎপর সরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে রাতারাতি দাম বাড়লেও, দ্রুতই দাম কমবে বলে আশ্বস্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বন্দরে আটকে থাকা পেঁয়াজ দ্রুত খালাসে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এদিকে বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে।
আমদানির ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে :
ভারত থেকে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে একদিনে ৭৪৩ টন পেঁয়াজ এসেছে।
এদিকে, আকস্মিকভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, ১২০ টাকার পেঁয়াজ একদিনের ব্যবধানে ২০০ টাকা হয়ে যায়, এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তিনি আরও বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, আর পরদিনই পেঁয়াজের দাম ৭০-৮০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে, এদেশের জনগণের জন্যই তাদের ব্যবসা। অবশ্যই তারা লাভ করবেন, তাই বলে আগের দিন ছিল ১২০ টাকা, একদিনের মধ্যে ২০০ টাকা হয়ে যায়, এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
পেঁয়াজের আমদানির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মূলত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টরের ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা আছে। সেগুলো যাতে ছাড়া হয় সে বিষয়ে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই এসব পেঁয়াজ দেশে আসবে।
বাজারে বাজারে অভিযান :
অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বেশি দামের আশায় পেঁয়াজ মজুদ করে ফেলেছেন। ফলে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। অনেক দোকানে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। মজুতকৃত পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে আসতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এছাড়া র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি ও জেলা প্রশাসন থেকেও বাজার তদারকি করা হচ্ছে।
ক্যাবের সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে, সঙ্গে সঙ্গে এটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, যেখানে পেঁয়াজ আগে থেকেই আছে। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোন বিধি বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, প্রকৃতপক্ষে, বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেশ কয়েকটি নিত্যপণের দাম বেড়ে যায় বলেই আমরা দেখে আসছি। এর চেয়েও বেশি হতাশাজনক বিষয় হলো, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে এই দাম বৃদ্ধিকে স¤পূর্ণ অযৌক্তিক বলেও মনে হয় – এর ফলে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য ভোক্তাদের শোষণের চেষ্টা করে।
ভালো ফলনের খবর দিচ্ছেন কৃষকরা :
বাজারে মুড়িকাটা ও আগাম মওসুমের পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। দেশে প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও আগামী তিন মাসে মুড়িকাটা ও আগাম মওসুমের আবাদ থেকে প্রায় আট লাখ টন পেঁয়াজ পাওয়ার আশা করছে এ মন্ত্রণালয়।
বেশি দাম পাওয়ায় ক্ষেত থেকে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলছেন মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মুন্সীগঞ্জ নাটোর, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুরের কৃষকরা। এ কারণে পুরান পেঁয়াজের সঙ্গে অনেক বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ ও দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ওঠায় শিগগিরই দাম কমে আসবে বলে আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
পেঁয়াজের ভালো ফলনের হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা। এ বছর জেলার সাড়ে চার হাজার কৃষক কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় সাড় চার হাজার বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করেছেন। ভালো ফলন ও ভালো দাম পেয়ে তাঁরা দারুণ খুশি। সদর উপজেলার রানীহাটি ইউনিয়নের রানীহাটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় পেঁয়াজচাষি সায়েম আলী, কামাল আলী, মো. মোমিন, রুবেল আলী ও তরিকুল ইসলামেরদের প্রায় পাশাপাশি জমি। এরই মধ্যে কেউ কেউ জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলেছেন। কেউ পেঁয়াজ তুলছেন। এই কৃষকেরা জানান, এক বিঘা করে জমিতে চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাঁরা প্রণোদনা হিসেবে পেয়েছেন ভারতীয় এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজের বীজ, সার-কীটনাশক ও ২ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর ধরেই পেঁয়াজের চাষ করলেও এবার ফলন বেশি হয়েছে বলে জানালেন তাঁরা।
পেঁয়াজ চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ১০ থেকে ১২ দিনে তিনি খেতের সব পেঁয়াজ ঘরে তুলেছেন। বিক্রিও করছেন। এক বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ১০০ মণ। শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তবে গত শনিবার তাঁর বাড়ি থেকেই এক পাইকার ৫ মণ পেঁয়াজ কিনে নিয়ে গেছেন ৬ হাজার টাকা মণ দরে।
সায়েম আলী জানান, তিনি অল্প কিছু পেঁয়াজ তুলেছেন। পেঁয়াজের আকারও হয়েছে বেশ বড়। একেকটি ওজন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম। এক বিঘায় ফলন ১১০ থেকে ১২০ মণ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
রানীহাটি এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জোহরুল ইসলাম বলেন, রানীহাটি মৌজায় ১৮ জন কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে ১৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করানো হয়েছে। সবার জমিতেই ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১০৫ থেকে ১২০ মণ ফলন হবে বলে আশা করা যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এ বছর দেশে প্রায় ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু মজুত সুবিধার অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সেকেন্দার আলী বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। যদিও সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। এব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে এখনই নতুন পেঁয়াজ ওঠার সময়। এরইমধ্যে বাজারে মুড়িকাটা ও আগাম মওসুমের পেঁয়াজ এসেছে। আগামী কয়েকদিনে মধ্যে নতুন পেঁয়াজের আমদানি আরও বাড়বে। তখন পেঁয়াজের দাম অনেক কমে আসবে। কারণ এবছর দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com