1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করেছে বাংলাদেশ

  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক ::
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার করেছে বাংলাদেশ সরকার। এ উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শুরুতেই স্বাধীনতাবিরোধীদের তুমুল প্রতিরোধ ও আন্দোলনের মধ্যে এগিয়ে নিতে হয় বিচার কাজ। বিরোধীপক্ষ বিচার কাজকে যেকোনও মূল্যে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার বাংলাদেশ করেছে, তা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশ একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে। ন্যায়বিচার করতে চাইলে বাংলাদেশকে অনুকরণ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ হত্যাযজ্ঞে কতজন বাঙালি নিহত হন, তা নির্ধারণে কোনও জরিপ পরিচালিত হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার অব্যবহিত পরের এক হিসাব অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ ধরা হয়। পাকিস্তান বাহিনীর এই গণহত্যা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকা-ের অন্যতম।
প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন (৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয়) অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণায করায় পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শহরে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভ দমনের লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয় কয়েকশ’ বাঙালি। আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় এবং পাকিস্তান সরকার প্রদেশে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে গত ১৩ বছরে রায় হয়েছে ৫৩টি মামলার। সাজা হয়েছে ১৩৯ জন আসামির। তাদের মধ্যে মৃত্যুদ-ের রায় হয়েছে ৯৯ জন আসামির। আমৃত্যু কারাদ- পেয়েছেন ২৫ জন। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে ৯ জনের। সশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়েছে ৬ জনকে।
ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে প্রথম দফায় জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী – এ ছয় জনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আরও ৪৩টি আবেদন। সবশেষ ২০১৭ সালে নিষ্পত্তি হয় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা।
অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন বলেন, দুটি মামলা (কায়সার ও আজহার) নিষ্পত্তির জন্য তালিকায় ছিল। কিন্তু তাদের আইনজীবীরা সময় নিয়েছিলেন। এখন মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। কার্যতালিকায় আসলে ধীরে ধীরে সবগুলো মামলা নিষ্পত্তি করা হবে।
কেমন হলো এই বিচার বলতে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার বাংলাদেশ করেছে, তা বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়। বাংলাদেশ একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে। ন্যায়বিচার করতে চাইলে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে অপরাধীদের আপিলের সুযোগ, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আইসিসিতে সেই সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সব সুযোগ দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ মানবাধিকারের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্র। বিশ্বের উচিত হবে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দেওয়া।
যদিও এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে জামায়াতের লবিস্ট গ্রুপের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে পশ্চিমা কয়েকটি গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। মানবাধিকার বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের যে সংজ্ঞা দেয়, তার সঙ্গে আমাদের বিস্তর ফারাক রয়েছে। সেটা কি তাদের সংজ্ঞা, নাকি আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা, সেটা বিবেচনা করতে হবে। ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলে যারা, তারা নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখে না। যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে বারবারই পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলো নেতিবাচকতা দেখিয়েছে। মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের অবস্থান আর অতীতের বাস্তবতা- কতটা ভিন্ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভ্যতা দর্শন সব জায়গায় পশ্চিমের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য সুস্পষ্ট। ফলে এ ক্ষেত্রেও সেটি থাকারই কথা। প্রশ্ন হলো কোথাকার মানবাধিকার সংজ্ঞা মান্যতা পাবে। আমাদের এখানে প্রাচীনকাল থেকে যে সভ্যতার দেখা মেলে, সেখানে নতুন করে মানবাধিকারের আলাপ পশ্চিম থেকে ধার নেওয়ার কোনও কারণ নেই।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com