শামস শামীম, দুবাই থেকে ::
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বৈশ্বিক সম্মেলন কপ-২৮ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে। মরুভূমির দেশখ্যাত দুবাইয়ের বিশেষায়িত নতুন আলো ঝলমলে এলাকায় রাষ্ট্রপক্ষের সম্মেলন বা কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ-২৮)। ১৬০ টি দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে চোখে পড়লো আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের অংশগ্রহণকারী নারী-পুরুষদের সংখ্যা বেশি। বৃহস্পতিবার দুবাই সময় রাত ৮টা পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের। পরদিনও বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা রেজিস্ট্রেশন করেন এবং সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ফ্রি মেট্রো কার্ড সংগ্রহ করেন।
১২ দিনের এই সম্মেলন শুরু হলেও দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে নেমে তেমন প্রচারণা লক্ষ্য করা গেলনা। এই হতাশা হিন্দুস্থান টাইমসের সাংবাদিক পূজা দাসের কণ্ঠেও লক্ষ্য করা গেল।
পূজা দাস বলেন, আলো ঝলমল দেশের আয়োজন। বিমানবন্দর থেকে নামার পর কোথাও বৈশ্বিক এই সম্মেলনের তেমন প্রচারণা দেখলাম না। এগুলো থাকলে ভালো লাগতো।
তার মতো কথা ব্রাজিলের অংশগ্রহণকারী মেরিনা ফেব্রিতাসের কণ্ঠেও। তিনি জানালেন, আফ্রিকার ছোট দেশগুলোর প্রতিনিধিরা জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি সম্বলিত নানা উপকরণ নিয়ে উপস্থিত হয়ে জলবায়ু দূষণের জন্য দায়িদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। দুবাইয়ের আর্থিক ক্ষমতা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী প্রচারণা কম।
জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা পৃথিবীর টিকে থাকার লড়াইয়ে কার্যকর ভূমিকা নেবার পাশাপাশি জলবায়ু ঝুঁকির জন্য দায়ী রাষ্ট্রগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। পৃথিবী সুরক্ষার অঙ্গিকারগুলো বাস্তবায়নের দাবি তুলেছেন। জীবাশ্ম-জ্বালানি নির্ভর সভ্যতা থেকে বেরুনোর কার্যকর উপায় খুঁজে বের করার দাবি তুলেছেন।
জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন হয় বলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানান। আর যে দেশগুলো জীবাশ্ম-জ্বালানির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম। দুবাই জলবায়ু সম্মেলনের সভাপ্রধান মনোনীত হয়েছেন আমিরাতের জাতীয় তেল কোম্পানি অ্যাডনকের প্রধান নির্বাহী সুলতান আল-জাবের। এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।
অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের ‘প্যারিস চুক্তি’র ৫টি বিষয় বাস্তবায়নে অঙ্গিকারাবদ্ধ রাষ্ট্রগুলো কী কী বাস্তবায়ন করেছে তা এবারের সম্মেলনের আলোচ্য। ৫টি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গ্লোবাল স্টকটেইক বা বৈশ্বিক অঙ্গীকারগুলোর বিষয়ে আপডেট, জীবাশ্ম জ্বালানী হ্রাসকরণ, জলবায়ু তহবিল অর্থায়ন, ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের অঙ্গিকার এবং স্বাস্থ্য নিয়েই প্যারিস চুক্তির দাবিগুলোর সার্বিক দিকই ১২ দিনের সম্মেলনে আলোচিত হবে। প্যারিস ঘোষণা অনুযায়ী বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির ভেতরে রাখা ও ক্রমান্বয়ে জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার কমানোর মূল অঙ্গীকার ছিল। তার ছিটেফোটাও বাস্তবায়ন হয়নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাই এবারের সম্মেলনে জোরেশোরে গ্লোবাল স্টকটেক আলোচনায় জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষয়ক্ষতি পূরণের তহবিল, জলবায়ু-উদ্বাস্তু, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্নগুলোকেই গুরুত্ব দেবার দাবি জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা।
চীনা নারী পর্যবেক্ষক বিপিয়াঙ বলেন, বড় দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতি কমিয়ে আনতে আন্তরিকভাবে কাজ না করলে এবং প্যারিস ডিক্লারেশন অনুযায়ী ঝুঁকি কমিয়ে আনতে না পারলে এসব আয়োজনের স্বার্থকতা আসবেনা।
সর্বশেষ কপ-২৭ অনুষ্ঠিত হয় মিশরের শারম আল শেখে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে জলবায়ু সম্মেলন হয়নি। এবারের কপ-২৮ হচ্ছে দুবাইয়ের এক্সপো সিটিতে।
জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ রিসোর্স সেনন্টার ফর ইন্ডেজেনাস নলেজ (বারসিক)-এর প্রোগ্রাম অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুরু হলো ১২ দিনব্যাপী জলবায়ু সম্মেলন। তবে এবার আফ্রিকার বঞ্চিত ও নি¤œকণ্ঠের মানুষের জোরালো উপস্থিতি দেখছি। প্যারিসচুক্তির অঙ্গিকারগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা এবারের আলোচনার জোরালো বিষয়। আশা করছি রাষ্ট্রপ্রধানরা এবার গুরুত্ব দিবেন। আমাদের রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে যারা আসছেন সবার কাছে জলবায়ু সুবিচার প্রত্যাশা করছি।