1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

স্বাস্থ্যসেবায় আয়ুর্বেদের অবদান ও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: ডা. সমীর কুমার সাহা

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম -এই থিমকে প্রাধান্য দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে ভারত মহাদেশীয় অঞ্চলে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাপদ্ধতির উদ্ভব হয়েছিল। এই আয়ুর্বেদ হলো স্বাস্থ্যের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতি, যা সুস্থতার জন্য শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলোকেও বিবেচনা করা হয়। আয়ুর্বেদীয় ভেষজ ওষুধ, যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম ম্যাসেজ, পুষ্টিকর ডায়েটসহ স্বাস্থ্য এবং আত্মিক-মানসিক প্রশান্তিকে উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি (থেরাপি) ব্যবহার করা হয়।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন। নানা কারণে দেশে সঠিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেকে, তাই বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশে আধুনিক উন্নত রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের ব্যবস্থা করাসহ স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে আয়ুর্বেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আবশ্যকতা আছে বলে মনে করি। কারণ, দেশে ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে স্ট্রোক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারসহ বহুবিদ অসংক্রামক রোগের। এসব রোগে আক্রান্তদের প্রতিকার বা নিরাময় বেশ জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনিরাময় যোগ্য, জীবনভর ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হয়।
এসব ক্ষেত্রে আগে থেকেই সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে দেশের জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা উচিত। আর সে জন্যই দেশের প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যবাহী চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ুর্বেদকে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে মূলধারার স¤পৃক্ত করা উচিত। বর্তমান বাস্তবতায় এটি এখন একটি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্ব ও উপকারিতা বিষয়ে বেশ অবগত আছেন বলেই তার ঐকান্তিক সদিচ্ছায় দেশের অনেক জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালে অ্যালোপ্যাথি (এমবিবিএস/বিডিএস) ডাক্তারদের পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক (বিএএমএস), ইউনানী (বিইউএমএস), হোমিওপ্যাথি (বিএইচএমএস) ডাক্তাররা নিয়োগ লাভ করে নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ-১৯ -এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা ভেষজ, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা উপেক্ষা করতে পারি না এবং মানুষের চিকিৎসার সুবিধার জন্য এগুলোর উন্নয়নে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে মানস¤পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং বিদেশে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি চিরায়ত ওষুধেরও ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা চিরায়ত স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান এবং বিশ্বব্যাপী ভেষজ (হার্বাল) চিকিৎসার চাহিদা ব্যাপক উল্লেখ করে তিনি চিরায়ত চিকিৎসার উন্নয়নে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ এখন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য কাজ করছে। স্বাস্থ্য খাত এসডিজির একটি অপরিহার্য অংশ। এসডিজির ৩.৮ টার্গেটে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।
আমরা যদি এই সময়ের মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে আরও উন্নত করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে এটি আমাদের জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করবে, এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এর অর্থ হলো প্রত্যেকে আর্থিক কষ্ট ছাড়াই মানস¤পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পাবে। এটি একটি সহজাত রাজনৈতিক লক্ষ্য, যা মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারের মধ্যে নিহিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধান উল্লেখ করেছে যে, স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ মান উপভোগ করা প্রতিটি মানুষের একটি মৌলিক মানবাধিকার।
আমাদের স্বাস্থ্য খাতে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে আয়ুর্বেদ এবং ইউনানির ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হতে পারে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আয়ুর্বেদ এবং ইউনানির মতো ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ব্যবহারের জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এটি সাশ্রয়ী এবং আমাদের দেশে সহজেই পাওয়া যায়। এমনকি পশ্চিমা বিজ্ঞানীরাও ঐতিহ্যগত ওষুধের প্রতি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ দিচ্ছেন। প্রমিত ফর্মুলেশন এবং আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে প্রাচীন পদ্ধতিটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
প্রাকৃতিক চিকিৎসা আয়ুর্বেদ-ইউনানীর ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি দেশের সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বৈচিত্র্য, নমনীয়তা, সহজলভ্যতা, উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং উন্নত দেশে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, আপেক্ষিক কম খরচ, প্রযুক্তিগত ইনপুটের সুবিধা, আপেক্ষিক নি¤œ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গুরুত্ব হলো ঐতিহ্যগত চিকিৎসাপদ্ধতির কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০০২)।
যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে, তাই আমরা ঐতিহ্যবাহী সেক্টরের কর্মীদের ব্যবহার করতে পারি। সময় এসেছে প্রাকৃতিক চিকিৎসাপদ্ধতিকে চিনতে এবং এর কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর। সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ ভূমিকা পালন করলে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাব্যবস্থা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
লেখক: আয়ুর্বেদ এন্ড ন্যাচারোপ্যাথি এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আয়ুন্স)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com