জয়ন্ত সেন ::
শাল্লায় অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে বোরোধানের বীজতলা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। এমন সময় বৃষ্টি হলে বীজতলার বড়ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন তারা। ১৫ ও ১৬ নভেম্বর দু’দিন ধরে আকাশ মেঘলা থাকায় বীজতলা তৈরি নিয়ে আশঙ্কা ছিলই কৃষকদের মনে। সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো ১৭ নভেম্বর শুক্রবার। দিনভর বৃষ্টি আর প্রবল বাতাসের কারণে যেনো ঘর থেকে বের হওয়াই মুশকিল ছিল। ১৭ নভেম্বরই বীজতলায় বীজ বাইন করার কথা ছিল উপজেলার হাজারো কৃষকের। কারণ, কার্তিক মাসের শেষ দিন থেকে আর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বীজতলায় বীজ বাইনের উত্তম সময় বলে মনে করেন তারা। সেই প্রস্তুতি নিয়েই গত ১২ নভেম্বর বীজধান পানিতে ভিজিয়ে নানা প্রক্রিয়া শেষে ১৭ নভেম্বর বীজতলায় বাইন করার কথা ছিল। অনেকই আবার গত ১৬ নভেম্বর বীজতলায় বীজধান বাইন করে ফেলেছেন। সেগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক কৃষকের ঘরে বীজধানে অতিরিক্ত লম্বা গেঁড়া হওয়ায় এগুলোও কোনো কাজে লাগবে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
আঙ্গারোয়া গ্রামের নিলেন্দু দাশ বলেন, ৪ কেয়ার বোরো জমির জন্য ১৬অক্টোবর ২হাজার দুইশ টাকার কৃষিবিদ জাতের বীজ বীজতলা ফেলেছিলাম, বৃষ্টি সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন টাকা জোগাড় করাই কঠিন। তাছাড়া সময়ও পিছিয়ে গেল এক সপ্তাহ। এই অসময়ে বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে মানুষের।
উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম বলেন, আমার ১৫ কেয়ার বোরোজমিতে বীজ লাগে ২০ কেজি। বিভিন্ন জাতের ২০ কেজি বীজধান আমি ৭হাজার ২শ টাকা দিয়ে কিনেছি। সব বীজধান বাইন করার কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় এগুলো আর তলায় বাইন করতে পারিনি। এখন ধানের গেঁড়া লম্বা হয়ে গেছে। এগুলো আর কাজে লাগবে না বলে জানান তিনি।
শ্যামলাল বিশ্বাস বলেন, তার ৩হাজার ২শ টাকার ১১ কেজি বীজ বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক বিপুল রায় বলেন, তার ৫ হাজার টাকার মূল্যের ১৬ কেজি বোরোধানের বীজ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার ভান্ডাবিল ও ছায়ার হাওরের বিভিন্ন কৃষকের বীজতলায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে বহু কৃষকের বীজতলা।
কৃষক গৌরমোহন রায় বলেন, আমার ৩৫ কেজি বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১২ হাজার টাকার বীজ নষ্ট হয়েছে।
এবিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, এই বৃষ্টিতে কৃষকের বীজতলার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন আর সময়মত কৃষক বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন না। যার প্রভাব পড়তে পারে ফসল ঘরে তোলার ক্ষেত্রেও।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, আগামী ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত আবহাওয়া খারাপ থাকবে এ বিষয়টি আমরা কৃষি অফিসসহ আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুকে প্রচার করেছি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে আমরা দাঁড়াবো। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই কৃষকদের মাঝে বীজ বিরতণের কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, উপজেলায় এবছর ২৩ হাজার হেক্টর বোরজমিতে বোরোধান আবাদ করা হবে। এসব বোরোজমি চাষাবাদ করতে কৃষকদের প্রায় ১০ কোটি টাকার বীজ কিনতে হয়। এরমধ্যে বৃষ্টিতেই ৪ হাজার কৃষকের বীজতলায় প্রায় ৭ কোটি টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটির সাধারণ স¤পাদক। তিনি বলেন, বীজতলায়ও যেমন অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তেমনি ঘরে যে ভেজানো বীজ রয়েছে ক্ষতি হবে সেই বীজেরও। সরকার যেনো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে অতিদ্রুত বিনামূল্যে বীজ ধান বিরতণের ব্যবস্থা করেন এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।