স্টাফ রিপোর্টার ::
মহান মুক্তিযুদ্ধের গেরিলাযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। বৃহ¯পতিবার ছিল তাঁর শহীদ হওয়ার ৫২তম বার্ষিকী। এদিন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ক্যা¤পাসের শহীদ তালেব, গিয়াস, জগৎজ্যোতি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁকে বিন¤্র শ্রদ্ধায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির পক্ষ থেকে স্মরণ করা হয়।
দুপুরে কলেজ ক্যা¤পাসে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সহসভাপতি কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রকিব, সহকারী অধ্যাপক আহসান শহীদ আনসারী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি সাধারণ স¤পাদক অ্যাডভোকেট খলিল রহমান, সহসাধারণ স¤পাদক দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী ও মো. রাজু আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুরঞ্জিত গুপ্ত রঞ্জু ও মো. আমিনুল হক, সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. আকিক জাবেদসহ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এরপ আগে সকালে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শামসুল আলম শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।
১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল জগৎজ্যোতি দাসের জন্ম হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের জলসুখা গ্রামে। সুনামগঞ্জ কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন এবং ২৮ মার্চ সুনামগঞ্জের অস্ত্রাগার ভেঙে রাইফেল লুট করে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে যুক্ত হন। এই গেরিলা দলের অধিনায়ক ছিলেন জগৎজ্যোতি দাস। ভাটি অঞ্চল মুক্ত রাখার পাশাপাশি তাঁদের বিশেষ দায়িত্ব ছিল ভৈরব-আজমিরীগঞ্জ-শেরপুর এলাকায় নদীপথ পাকিস্তানি সেনাদের জন্য বিপদসংকুল করে তোলা। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে জগৎজ্যোতি তাঁর দল নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার কুঁড়িতে ফিরে আসেন। ১৬ নভেম্বর ভোরবেলা তাঁরা বাহুবলের দিকে রওনা দেন পরিকল্পনা ছিল আজমিরীগঞ্জ হয়ে যাবেন। আজমিরীগঞ্জ যাওয়ার আগেই বদলপুরের কাছে রাজাকারের দল দেখে জগৎজ্যোতি ৩০ জনকে বদলপুরে রেখে বারোজনকে সঙ্গে নিয়ে রাজাকারদের ধাওয়া করেন। এটা ছিল শত্রুর পাতানো ফাঁদ। রাজাকারের দল কিছুদূর গিয়ে পালিয়ে যায় জগৎজ্যোতির নিজ গ্রাম জলসুখার দিকে। আর জগৎজ্যোতি আটকে যান খৈয়াগোপির বিলে পাকিস্তানি বাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণের ফাঁদে। ১৬ নভেম্বরের এই যুদ্ধেই শহীদ হন জগৎজ্যোতি দাস।
অসম সাহসী জগৎজ্যোতির মৃত্যুসংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে খুব গুরুত্বসহ প্রচার করা হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য শহীদ জগৎজ্যোতি দাসকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করে।