প্রাথমিকের শিক্ষক দিয়ে চলছে নি¤œ মাধ্যমিকের পাঠদা
আশিস রহমান ::
বিদ্যালয়ের অধিকাংশ পাঠদান কার্যক্রম চলছে পরিত্যক্ত টিনশেড ভবনে। এতে শুষ্ক মৌসুমে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালানো গেলেও বর্ষা মৌসুমে বিঘœ ঘটে। প্রাক-প্রাথমিকসহ ৯টি শ্রেণীর জন্য ১৩টি শ্রেণীকক্ষ দরকার। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষসহ ৭টি কক্ষে পালাক্রমে গাদাগাদি করে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জনবল, অবকাঠামোগত সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দোয়ারাবাজার উপজেলার কান্দাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
২০১৩ সালে এই বিদ্যালয়টিকে পঞ্চম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নি¤œ মাধ্যমিকের এই নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ায় জনবল সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামে ১৯৫০ সালে কান্দাগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩৩ জন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে কর্মরত শিক্ষক আছেন ৮ জন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত নেই কোন বিষয়ভিত্তিক আলাদা শিক্ষক। শুধু তাই নয়, নি¤œ মাধ্যমিকের অতিরিক্ত এই তিন শ্রেণীর জন্য নেই কোনো শ্রেণীকক্ষ, আসবাবপত্র ও পাঠদানের জন্য শিক্ষা উপকরণ। এসবের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দও নেই। এতে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কান্দাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। প্রাথমিকের শিক্ষক দিয়েই চলছে নি¤œ মাধ্যমিকের পাঠদান কার্যক্রম। নি¤œ মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য এই বিদ্যালয়ে আরও অন্তত ৭জন শিক্ষক দরকার।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষাবান্ধব এই উদ্যোগটিকে সফল করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের ৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নি¤œ বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণী পাশের পর ঝরে যেতো। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাঠদান চালু হওয়ায় আশপাশের প্রায় ১৫টি গ্রামের ছেলে-মেয়েদের ঝরেপড়া ও বাল্যবিয়ের হার কমেছে। কিন্তু শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের কারণে সঠিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও প্রথমদিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চালু করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষককে মূল বেতনের ৩৫ ভাগ ও সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতনের ২৫ ভাগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আসবারপত্র, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর না থাকায় পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নেই। এছাড়া গত দশ বছর ধরে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চললেও সরকারিভাবে অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পঞ্চানন কুমার সানা বলেন, সমস্যা সমাধান পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদ্যালয়টি আমাদের বিশেষ নজরে আছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির মাসিক মিটিংয়ে বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু বলেন, কান্দাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।