বাদল কৃষ্ণ দাস ::
সরকারি খাস জায়গা আর ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডিয় জায়গা সমন্বিত করে জোরপূর্বক বাজার নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী, মশালঘাট, তিলকই গ্রামের কয়েকশ জনতা। সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বেহেলী ইউনিয়নের বেহেলী গ্রামে বৌলাই নদীর পাড়ে বাজার নির্মাণের স্থানে মানববন্ধন করেন শত শত লোকজন।
এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নির্মাল্য কান্তি রায় সসীম, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরেশ তালুকদার, ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার যীশু তালুকদার, করুণাকান্ত তালুকদার, প্রিয়ব্রত রায়, চন্টু কুমার দাস, বাবুল পাল, গীতা রাণী পাল প্রমুখ।
মানববন্ধনকারীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, জামালগঞ্জের বেহেলী মৌজার ১নং খতিয়ানের ২২নং জেএলস্থ ১৯৯, ২০০ ও ২০১ নং দাগের প্রায় তিন একর গোপাট রকম ভূমিতে বেহেলী ইউনিয়ন এলাকার কিছু ব্যক্তির উদ্যোগে বাজার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এনিয়ে বেহেলী, মশালঘাট, তিলকই গ্রামের মানুষের ঘোর আপত্তি রয়েছে। তারা ২ শতাধিক লোকের স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন চলতি বছরের গত ৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও ৫ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। মানববন্ধনে বক্তারা জানান, বেহেলী গ্রামের পাশে বৌলাই নদীর উত্তর পাড়ের খোলা জায়গাটিতে প্রাচীনকাল থেকে বেহেলী, মশালঘাট, তিলকই গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় বিভিন্ন পূজা পার্বণ, স্থানীয় হাওরের ধান মাড়াই, ধান শুকানোর খলা হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। জায়গাটি গোচারণ ভূমি আর হালট হিসেবেও প্রাচীনকাল থেকে পর¤পরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে সরকারের খাস জায়গার সাথে লাগোয়া ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডীয় ভূমিও রয়েছে। কিন্তু বিগত ২০১৭ সাল থেকে এলাকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী ব্যক্তি বাজারের নামে বাণিজ্যিক প্লট আকারে বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উপজেলা প্রশাসনকে উদ্বুদ্ধ করে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বৌলাই নদী থেকে মাটি ভরাটে লিপ্ত রয়েছেন। বেহেলী ও তার আশপাশের গ্রামের নিরীহ হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারের উদ্যোক্তা পরিচয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র বাজার বন্দোবস্তের নামে জায়গাটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে নানাভাবে স্থানীয়দের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, বিগত ২০১৭ সালে ঐস্থানে স্থানীয়দের আপত্তি অগ্রাহ্য করে বাজার স্থাপনে তৎপরতা শুরু হলে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এরপর তৎকালীন ইউএনও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পারিপার্শ্বিক মানবিক পরিস্থিতি যাচাই-বাছাই বিবেচনা করে সেখানে বাজার নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করেন। এরপর অন্য ইউএনও এই উপজেলায় যোগদানের পর ওই চক্রটি একই রকম তৎপরতা চালায়। কিন্তু সকল নির্বাহী কর্মকর্তাগণ প্রভাবশালী চক্রের উদ্যোগ আমলে নেননি। কিন্তু স¤প্রতি জামালগঞ্জে নবাগত ইউএনও আগমনের পর ওই চক্রটি আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে। এবং উপজেলা নির্বাহী প্রধান কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। বক্তারা আরো জানান, বাজার নির্মাণে জায়গার দখল নিয়ে দখলদারদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে প্রতিটি ভিট বাবত লাখ টাকায় বিক্রির পাঁয়তারা করছেন। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন এই সিন্ডিকেটের কয়েকজন। দখলদারদের মধ্যে রানু পাল ও আফসর উদ্দিন বিবাদকৃত জায়গায় পাকা ঘরও নির্মাণ করেছেন।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে কারা যেন নদী থেকে মাটি তুলে বাজার ভিট তৈরি করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ড্রেজার মেশিন বন্ধ করে দিয়েছি।