বাদল কৃষ্ণ দাস ::
জামালগঞ্জ উপজেলার মরণফাঁদ ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্যের তেরানগর ব্রিজ এখন ফুটব্রিজের সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। এই ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতকারী এতদাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘ এক যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৬ সালে ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরু আকারের ব্রিজটি নির্মিত হয়। যে কারণে নির্মাণের ৮ বছরের মাথায় পরিবহন সক্ষমতা হারিয়ে যায়। যে কারণে ২০১৩ সালে এলজিইডি বিভাগ এটাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এই ব্রিজ নিয়ে অব্যাহত সংবাদ প্রকাশ করলে সময়ে সময়ে উপজেলা এলজিইডি বিভাগ থেকে ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের প্রস্তাবনা প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু তেরানগর ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গুরুত্ব না দেবার কারণে এর কোন অগ্রগতি হয়নি। বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের সময়কালে একাধারে নির্বাচিত শীর্ষ জনপ্রতিনিধিও রহস্যজনক কারণে ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজন অনুভব করেননি। এ বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের কাছে এলাকার লোকজন বার বার ধর্ণা দিয়ে ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের দাবি জানালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ নেতৃত্ব তেরানগর ব্রিজ প্রকল্প রাখঢাক কাটাছেঁড়া করে নিজের বাড়ির কাছে স্থানান্তর করে নিয়ে যান। অথচ শীর্ষ নেতারা কেউই তেরানগর ব্রিজ নির্ভর এতদাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের জনদাবিকে মূল্যায়ন করেন নি। জনগণের প্রত্যাশাকে হতাশায় নিমজ্জিত করেছেন। লোকজন বলাবলি করেন, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারের কাছে ১৫ মিটার দীর্ঘ ছোট একটা ব্রিজ অক্ষত আছে। সেটি নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্টের লোক আসে, অথচ ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্যের জনবহুল এলাকার সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ তেরানগর ব্রিজের বিষয়ে কোনো সাড়া নেই। তেরানগর ব্রিজের বিষয়ে বিগত সময়ে নির্বাচনের ডামাডোলে নেতারা একাধিকবার ব্রিজটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে গিয়ে কথা রাখেন নি। শীর্ষ জনপ্রতিনিধি কাউকেই কথা রাখতে সচেষ্ট করা যায়নি। অথচ এই ব্রিজ দিয়ে জামালগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলার একাংশের লোকজন নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাছাড়া হাওরে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কৃষিজাত পণ্য এই ব্রিজ দিয়ে পরিবহন করতে হয়। কিন্তু সরু কাঠামোর কারণে মালবাহী যানবাহন চলাচলের সুবিধা না থাকায় ফড়িয়া দালাল চক্রের কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করে চরমভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওরপাড়ের নি¤œ আয়ের লোকজন। তাছাড়া মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে মোটরসাইকেলই একমাত্র ভরসা। লোকজন, মালামাল পরিবহনে অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজি, আর হ্যান্ডট্রলি ব্যতিত অন্য কোন যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। সম্প্রতি জামালগঞ্জ উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন চালু হয়েছে। কিন্তু জামালগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে তেরানগর ব্রিজ নির্ভর এলাকায় কোথাও অগ্নিকা- সংঘটিত হলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এই ব্রিজ দিয়ে যেতে পারবে না। ফলে ফায়ার সার্ভিস সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে যাচ্ছে বিপুল জনবসতি। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রতি বছরই জরাজীর্ণ, পরিত্যক্ত, এই ব্রিজ হালকা যানবাহনের চাপে স্থানে স্থানে ধ্বসে পড়লে লাগোয়া দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ নিজ উদ্যোগে জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের কাজ করেন।
এ বিষয়ে জামালগঞ্জ উপজেলার এলজিইডি বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল মালেক মিয়া জানান, আমি এই ব্রিজটি নির্মাণের জন্য দুই বছর ধরে জোর চেষ্টা করছি। একাধিকবার তথ্য-উপাত্তসহকারে ছবিসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এরপর এডিশনাল চীফ ইঞ্জিনিয়ার এসে ব্রিজটি পরিদর্শন করে গেলেন, টিম এসে সার্ভে করে গেলো। তবুও আজ পর্যন্ত ব্রিজটি কোনো প্রকল্পেই ঢুকেনি। এমপি সাহেবের কাছে কতবার বললাম, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো জায়গা থেকেই কোনো নির্দেশনা আসে নাই।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা সেখানকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি। গেল বন্যার পর থেকে আমি জেলাতে মাসিক সমন্বয় সভায় এই ব্রিজের বিষয়ে জোরালো দাবি জানিয়েছি। এলজিইডি প্রকৌশলী আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু কি কারণে সেটি হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।