মুঠোফোনে বিদ্যুৎতরঙ্গের সংযোজনসুবিধা অনেক। সাধারণ মুঠোফোন দিয়ে একস্থান থেকে অন্য স্থানে তাৎক্ষণিক ছবি তোলে সে-ছবি কাক্সিক্ষতজনের কাছে পাঠানো যায়। রাজনীতির মাঠে ব্যস্তজনেরা রাস্তা থেকে অবরোধ কর্মসূচির বাস্তব ছবি তোলে সে-ছবি কারও কারও কাছে পাঠাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত একটি ছবি পাঠানো হয়েছে দলের হাই কমান্ডের কাছে, যাতে তাঁর মনোরঞ্জন হতে পারে, তিনি যাতে তৃপ্ত হতে পারেন। এবংবিধ একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘পুলিশ হত্যার পর হাইকমান্ডে ছবি পাঠান ছাত্রদল নেতা’।
বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় গত ২৮ অক্টোবর শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত একজন পুলিশকে খুন করা এবং সে-ছবি দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো আপাত দৃষ্টিতে মামুলি ঠেকতেই পারে কারও কারও কাছে। এমন মানুষও এই দেশে আছেন, যিনি বা যারা এমনটি ভাবতে পারেন। সম্ভবত ছবি যার কাছে পাঠানো হয়েছে সে-হাইকমান্ড ভেবেছেন, যেহেতু তিনি তার পক্ষ থেকে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়ারূপ বিবৃতি প্রদান করেন নি, বরং মৌন সম্মতি লক্ষণের ভেতরেই নিজেকে আটকে রেখেছেন। আরও দু’চারটা লাশ পড়লেও তাতে কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না বলেই বোধ করি তিনি মনে করেন এবং যথার্থ অর্থে তেমনটি হলে তার আপত্তি বলেও কীছু নেই।
অতীতের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও দেশবাসী তার প্রমাণ পেয়েছেন। এই জন্য তিনি নির্বিকার নয় বরং কোনও একধরনের মউজের মধ্যেই আছেন বলে মনে করা যেতে পারে। মানুষ খুন করলে মানুষের কেমন লাগে জানি না। মহাভারতের রণক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে অর্জুন যুদ্ধে নামার আগে মানুষ খুন করতে উদ্যতাবস্থায় বিষাদাক্রান্ত হয়েছিলেন। এখনকার কোনও কোনও রাজনীতিবিদ বোধ করি তেমন মানবিকতায় আক্রান্ত হন না এবং প্রকারান্তরে রাজনীতির মাঠে খুন একটা সহজ বিষয় হয়ে উঠেছে। এই সহজ হয়ে যাওয়াটা সত্যিকার অর্থেই ভয়ঙ্কর ও বীভৎস একটা বিষয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আপাতদৃষ্টিতে এবংবিধ হত্যালীলাকে মামুলি বলে এড়িয়ে যাওয়াটাও আরও অধিক একটা মামুলি ব্যাপার বটে। কিন্তু এই ঘটনার পেছনে একটা ভয়ঙ্কর কীছুর প্রচ্ছায়া বর্তমান আছে, সেটা অনুভব করতে বুদ্ধি ধার করার দরকার পড়ে না, এমনিতেই বুঝা যায় অথবা যৎকিঞ্চিৎ বুদ্ধি খরচ করলেই হয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বরং নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইতোমধ্যে আমাদের দেশের রাজনীতি অপকৃষ্টতার পরাকাষ্ঠা অর্জন করেছে। অর্থাৎ প্রকৃতপ্রস্তাবে কেবল পচেনি, বরং একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।
বিস্তারিত বিশ্লেষণে যেতে চাই না। কেবল বলি, যদি এমনি বিবেকবর্জিত ও পাশবিকতায় ম-িত দানবিক হয়ে উঠে রাজনীতির নায়কদের চরিত্র, তাহলে সেটা দেশের কী মঙ্গল করবে বুদ্ধিতে কুলায় না। এই রাজনীতিকে পরিহার করা উচিত।