নির্মল চন্দ্র সরকার ::
প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামত না করায় মধ্যনগর-মহিষখলা সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। এই সড়কটির ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটারই ভাঙাচোরা। ফলে এ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষজনকে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর-মহিষখলা সড়কটির দূরত্ব ১৫কিলোমিটার। এটি উপজেলার প্রধান সড়ক। এখানকার বংশীকুন্ডা উত্তর, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ, চামরদানী ও মধ্যনগর ইউনিয়নের মানুষজনকে সড়কটির ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে মহিষখলা বাজার পর্যন্ত সড়কটির তীর ঘেঁষে বোয়ালা, লুঙ্গাতুঙ্গা, মুক্তারখলা, এরনের বিল, পাশারানী ও পিচ গাং সোমেশ্বরী হাওরটি অবস্থিত। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে মধ্যনগর পাবলিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে দাতিয়াপাড়া গ্রামের সামনের সড়ক পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কে ইটের সোলিং ও সড়কটি ভাঙনরোধে জিও টেক্সটাইল (এক ধরনের বালি ভর্তি বস্তা) দেওয়া হয়। ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরের দাতিয়াপাড়া গ্রামের সামনের সড়ক থেকে মহিষখলা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের পাকাকরণ কাজ করা হয়। সড়কের এই দুটি অংশ নির্মাণকাজের ৪/৫বছর যেতে না যেতেই হাওরের প্রবল ঢেউয়ে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। ফলে সড়কটির বেশির ভাগ অংশে ইটের সোলিং সড়কের দুই পাশে সরে যায় এবং পাকা অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সড়কের বিভিন্ন অংশে মাটি ফেলে সাময়িকভাবে জন ও যানচলালের উপযোগী করেন। গত বর্ষা মৌসুমে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এই সড়কটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে এটির ওপর দিয়ে গড়ে দৈনিক চার শতাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করে।
উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের চামরদানী গ্রামের বাসিন্দা দেবল পোদ্দার বলেন, সড়কটির ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটারই ভাঙাচোরা। সড়কের বেশির ভাগ স্থান থেকে ইটের সোলিং সরে গেছে। এই সড়কের একটি অংশ বেশ কয়েকবছর আগে পাকাকরণ করা হলেও নির্মাণের পর থেকে আজ অবধি এটি সংস্কার ও মেরামত করা হয়নি। ফলে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষজনকে দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করতে গিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণউড়া গ্রামের বাসিন্দা যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল চালক কমল সরকার বলেন, এই সড়কটার বেশিরভাগ অংশই ভাইংগা গ্যাছে। হুকনা মাসও এইডার উফুর দিয়া মোটরসাইকেল ছাড়া অন্যকুনু গাড়ি চলে না। অহন এইডা মরণ ফান্দে পরিণত অইছে। এই সড়কটা ঠিক করণ দরহার।
উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান নূরুনবী তালুকদার বলেন, এই সড়কটির অবস্থা এতই বেহাল যে শুকনো মৌসুমে একদিন মোটরসাইকেলযোগে মধ্যনগর উপজেলা সদরে গেলে দুদিন শরীর ব্যথায় ভোগতে হয়। নিরুপায় হয়েই আমাদেরকে সড়কটির ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। দ্রুত সড়কটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কাজ করার দাবি জানাচ্ছি।
মধ্যনগর ইউনিয়নের মধ্যনগর বাজারের বাসিন্দা সংস্কৃতিকর্মী আলা উদ্দিন বলেন, গত বন্যায় এই সড়কটির পুরো অংশই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এটির অবস্থা এখন খুবই খারাপ হয়ে গেছে। সড়কটি আরও উঁচুকরণ করা দরকার। এটি সারাবছরের জন্য জন ও যান চলাচলের উপযোগী করা হলে এখানকার মানুষজনদের সঙ্গে আশপাশের এলাকার মানুষজনদের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ও টাঙ্গুয়া হাওরের একটি অংশ এ উপজেলার সীমানায় থাকায় পর্যটন এলাকা হিসেবে এই উপজেলাটি দেশবাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন বলেন, আমি সম্প্রতি সড়কটি পরিদর্শন করেছি। এলজিইডির আরইআরএমপি প্রকল্পের শ্রমিকেরা এই সড়কের ভাঙা স্থানগুলোতে মাটি ফেলে চলাচলের জন্য উপযোগী করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। এই সড়কটির একটি অংশ টেন্ডার হয়ে গেছে। অপর অংশটির প্রাক্কলন তৈরির কাজ চলছে।