স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মইনপুর গ্রামে নওশাদ মিয়ার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দিবাগত রাত অনুমান ২টায় এই ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে ৩টি ঘর ও ৬টি গরু পুড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরিবারের দাবি বসতঘরে আগুন লাগার ঘটনায় আরও নগদ দুই লাখ টাকা এবং ৫ ভরি স্বর্ণ পুড়ে ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় পরিবারের ৫ জন আহত হয়েছেন। রবিবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পুলিশ পরিদর্শন করেছে।
রবিবার সকালে সরেজমিন গেলে পরিবারের লোকজন জানান, শনিবার দিবাগত রাতে পরিবারে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত অনুমান ২টায় পার্শ্ববর্তী সুরমা নদীতে মাছ ধরার জেলেরা আগুন দেখে ডাকাডাকি করে ঘরের মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। এ সময় ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা নীরব নামের একটি ছেলে জেগে উঠে। দরজা খুলে আগুন দেখে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসেন। এ সময় পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এলাকাবাসী। কেউ কেউ শহরের ফায়ার সার্ভিসে ফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু নদী পারাপারে সমস্যা থাকায় আসতে পারেননি দমকল বাহিনী। মুহূর্তেই তিনটি বসতঘরে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এতে ৩টি বসতঘর ও ৬টি গরু, আসবাবপত্র পুড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও নগদ ২ লাখ টাকাসহ ৫ ভরি স্বর্ণ পুড়েছে। এতে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।
এদিকে, আগুন নেভাতে গিয়ে ঘরের মালিক নওশাদ মিয়া (৫৫), স্ত্রী বায়তুন নেছা (৪৫), ছেলে নীরব মিয়া (১৮), মেয়ে সাজনা বেগম (২৫), জলি বেগম (১৪) আহত হয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন মিয়া, হাছান মিয়া, আব্দুস সামাদ, শিপু মিয়া, ইউনুস মিয়া, আলতাব আলী, মোহাম্মদ আলীসহ আরও অনেকে জানান, গ্রামে সবচেয়ে বড় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে নওশাদ মিয়ার বাড়িতে। ৩টি ঘর ও গরু ছাড়াও পাশের বাড়ির সিতারা মিয়ার খড়ের ভোলায়ও আগুনে পুড়ে গেছে। যদিও চারটি গরু বেঁচেছে তবুও এগুলোর অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিশি রাতের অগ্নিকা-ের সময় কেউ জেগে না উঠলে গ্রামের অনেক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যেতো।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত নওশাদ মিয়ার মাতা জয়তুন বিবি (৮২) বলেন, আমার পরিবার জীবনে কারো ক্ষতি করেনি। ঘরে আগুন লাগার ঘটনায় আমার ছেলে, নাতি-পুতিকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
ক্ষতিগ্রস্ত নওশাদ মিয়া বলেন, আমি এখন পথে বসেছি। দুর্বৃত্তদের আগুনে আমার বসতঘর, গরু, আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়েছে। আমি কারো ক্ষতি করিনি। কে আমার এতো বড় ক্ষতি করেছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
ইউপি ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল হাই বলেন, এই অগ্নিকা-ের ঘটনা ন্যাক্কারজনক। দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি আমাদের।
প্রাণিসম্পদ ডাক্তার মাহবুবুল হাছান রনি বলেন, সকালে খবর পেয়ে ছুটে এসেছি। অগ্নিকা-ের ঘটনায় ১টি গাভী গরু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই গরু সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা দিতো। অন্যান্য গরুর চামড়া পুড়ে সাদা হয়ে গেছে। আমি বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে এগুলোর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। অপরাধীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা বলেন, এলাকায় জুয়াড়ি ও মদ্যপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি প্রয়োজন। এই অগ্নিকা-ের ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার এস. আই মতিউর রহমান বলেন, আমি মইনপুর গ্রামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিদর্শন করেছি। এ সময় নেশায় আসক্ত ফখর উদ্দিন নামের একজনকে আটক করে নিয়ে এসেছি। তার পিতা মৃত রশিদ আলী। কেউ অভিযোগ করলে আটককৃতকে আসামি করা হবে।