1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

উন্নয়ন বনাম সন্ত্রাস : দুই শিবিরে বিভক্ত দেশ – নিজামুল হক বিপুল

  • আপডেট সময় সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

দেশের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। অন্যদিকে বিরোধী শক্তি, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই দুটি পক্ষ সক্রিয়। যারা মুক্তমনা, দেশকে ভালোবাসেন, মা-মাটিকে ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ৩০ লাখ শহীদ আর তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনাকে বুকে ধারণ করেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে ধারণ করেন, তারা লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী, যারা রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করছে, যারা অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশকে ধারণ করে না, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে পছন্দ করে না, তারা সবাই একত্রিত হয়েছে এক ছাতার নিচে।
তাদের বটগাছ হচ্ছে বিএনপি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই এই দেশের রাজনীতিতে মাওলানা মান্নান, গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানরা রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে। শর্ষিনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহর মত চিহ্নিত রাজাকার যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।
এইদেশের রাজনীতিতে শুধু নয়, খালেদা জিয়ার হাত ধরে নিজামী, মুজাহিদরা গাড়িতে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিলেন, মন্ত্রিত্বের স্বাদ পেয়েছিলেন। যার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত পতাকাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে।
এসব তথ্য সবই পুরোনো। নতুন করে একটু স্মরণ করে দেওয়া মাত্র। এই যে, গোটা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী দুই শিবিরে বিভক্ত তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরেকটি বিষয়। এই বিভক্তিতে নতুন করে ঘি ঢেলেছে- উন্নয়ন, উন্নয়ন এবং উন্নয়ন।
এখন বাংলাদেশ বিভক্ত উন্নয়ন আর উন্নয়ন বিরোধী শিবিরে। এক পক্ষ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র যে অপবাদ দীর্ঘ বছর ধরে বাংলাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে, সেই জায়গা থেকে বের করে এনে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নিরলস চেষ্টা করছে।
অন্যপক্ষ এই উন্নয়নকে দেখছে বাঁকা চোখে। তাদের দৃষ্টিতে দেশকে ফতুর করা হচ্ছে। তাই এই উন্নয়নকে রুখে দিতে মরিয়া বিরোধী গোষ্ঠী। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এটা তাদের সারা শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর উন্নয়ন বিরোধী গোষ্ঠী তৎপরতা ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে।
মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানিদের হাতে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুর্নগঠনে হাত দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ঘাতকের বুলেট তাকে দেশ গড়ার কাজ করতে বেশিদিন সময় দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে ঝাঁজরা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দেহ। শুধু তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতক চক্র। তারা সপরিবারে নির্মূল করতে পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছিল সেই রাতে। ঘটনাচক্রে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সেইদিন ঘাতকের বুলেট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ পেছন দিকে হাঁটতে শুরু করে। প্রথমে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদ, তারপর জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বদলে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র দেশ হিসেবে পরিচিত হয়।
জিয়াউর রহমানের পর জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত ছিলেন। এরশাদের ৯ বছরের সামরিক শাসনের অবসানের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় তিনি দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু স্বাধীনতার ২০ বছর পর বাংলাদেশ যে জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল সেইখানে পৌঁছাতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। তার পাঁচ বছর মেয়াদের শাসনামলে নানান প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেন। বিশেষ করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ করতে কৃষির প্রতি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। সার, সেচ ব্যবস্থা সহজ করতে ডিজেলে ভর্তুকি ছিল শেখ হাসিনা সরকারের বড় সাফল্যগুলোর একটি। বিদ্যুৎ খাতেও সাফল্য আসে। এর বাইরে আরও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তার শাসনামলেই যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসলেও বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। যা দিয়ে রাষ্ট্রের চেহারা পাল্টে দেওয়া যায়। কিংবা বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে তুলে ধরা যায়। বরং উল্টো ঘটনা ঘটেছে। সারের দাবিতে কৃষককে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মরতে হয়েছে।
বিদ্যুতের দাবিতে চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতার বদলে আবারও আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছিল দেশ। বিদ্যুতের খাম্বা তৈরি হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। আর দুর্নীতিতে পরপর পাঁচ বার বিশ্ব চ্যা¤িপয়ন হওয়ার লজ্জাজনক অধ্যায়ের কথা দেশবাসীর ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
এই সবকিছু পেছনে ফেলে ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প শুরু হয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎখাত; স্বাস্থ্যখাত; দরিদ্র-ভূমিহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া; তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করা; খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতা অর্জন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দেশের দরিদ্র মানুষকে নিয়ে আসা – এইরকম বহু বহু কর্মযজ্ঞ হয়ে গেছে ১৫ বছর ধরে।
আমরা যদি সেইগুলোর দিকে তাকাই তাহলে মোটাদাগে বলা যাবে পদ্মা সেতুর কথা। শুরুতেই দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা দেওয়া হয়। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘ সেতু। যেটি দেশকে গোটা বিশ্বে আলোকিত করেছে, আত্মমর্যাদার আসনে বসিয়েছে।
এই ১৫ বছরে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে স্বপ্নের মেট্রোরেলের যুগে। হাতিরঝিলের মতো পরিবেশবান্ধব বড় উন্নয়ন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হয়েছে।
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপন (যেটি উদ্বোধনের অপেক্ষায়) উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কাজ। এর বাইরে দেশজুড়ে উন্নয়নের একটা বড় ছোঁয়া লেগেছে।
এই যে উন্নয়ন তা সহ্য হচ্ছে না উন্নয়ন বিরোধীদের। তাই উন্নয়নকে ঠেকাতে রাজনৈতিক সহিংসতার জন্ম দেওয়া হয়। যেখান থেকে শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও, বোমাবাজি, মানুষ হত্যার মতো নির্মম ঘটনা।
সরকার হঠানোর আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশজুড়ে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও করেছিল তাতে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের নি¤œআয়ের মানুষ।
আবারও সেই একই কায়দায় সরকার হঠানোর নামে শুরু হয়েছে হরতাল-অবরোধ। যা দেশকে পিছিয়ে দিতে পারে। তাই বলি, সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। যে মানুষের জন্য আপনারা আন্দোলন করার কথা বলছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না, পুড়িয়ে মারবেন না। দেশের সম্পদের অনিষ্ট করবেন না। অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা করে উন্নয়ন ঠেকানো যাবে হয়তো, কিন্তু সরকার পরিবর্তন কি করতে পারবেন?
আমাদের মনে রাখা উচিত, মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে, তার রুটি-রুজিতে ধারাবাহিক বাধা আসলে তারা কিন্তু ঘুরে দাঁড়াবে। তখন দায় আপনাদের নিতে হবে- যারা আজ উন্নয়নকে বাধা দিচ্ছেন সন্ত্রাসী কায়দায়, চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে, মিথ্যা অপপ্রচার করে, গুজব রটিয়ে কিংবা দেশের স¤পদ পুড়িয়ে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com