আব্দুল্লাহ আল মামুন ::
জামালগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কামলাবাজ-নয়াহালট সড়কটি বিগত বন্যার পরও কোন সংস্কার করা হয়নি। সীমাহীন ভোগান্তিতে যাতায়াত করছেন স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, বিগত ১০ বছর ধরে দক্ষিণ কমলাবাজ নয়াহালট সড়ক সংস্কারে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নেই কোন নজর। এতদিন কষ্ট করে চললেও বিগত বন্যায় সড়কটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। যান চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, নয়াহালট মাদ্রাসা, জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ, জামালগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয, জামালগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ আশেপাশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম এ সড়কটি। বিগত বন্যায় নয়াহালট হিন্দু হাটির পার্শ্ববর্তী দুটি কালভার্টের উভয়পাশে মাটি সরে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসহ রাস্তায় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এছাড়াও অসুস্থ শিশু ও বয়স্কদের উপজেলা হাসপাতালে আনা নেওয়ায় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
দক্ষিণ কামলাবাজের আবেদা খাতুন বলেন, আমরার রাস্তাঘাট ভাঙ্গা, ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাইতে পারে না। ইতা কেউ দেখরা নাই, রাস্তাঘাট ঠিক কইরা দিত কইয়া যায়, কেউতো আর দেয় না।
সমাজকর্মী আলী আসগর বলেন, রাস্তাটির ১০ বছর ধরে কোন কাজ হয় না। যে অবস্থায় আছে আমরা একটা রোগী লইয়া হাসপাতালে যাইতে গেলে রিকসায়ই মারা যাওয়ার অবস্থা। মাননীয় সংসদ সদস্যরে কয়েকবার জানাইছি, আমরারে আশ্বাস দেন- ‘হবে’। এই পর্যন্ত ১০ বছরের মধ্যে কোন কাজ হয় নাই।
পল্লী চিকিৎসক সুমন মিয়া বলেন, জামালগঞ্জ থেকে নয়াহালট রাস্তাটি মরণ ফাঁদ। আমার চেম্বারে অনেক রোগী আসে, প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ইমার্জেন্সি রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হলে হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রী সহ দুইটি গ্রামের হাজারো মানুষ চলাচল করতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার জিয়াউর রহমান বলেন, ছাত্র-ছাত্রীসহ দুই গ্রামের অসংখ্য মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ইউএনও স্যারসহ সংশ্লিষ্ট অফিসারগণ অনেকবার রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন। তারা বলেছেন কাজ হবে। বিগত বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়েছে রাস্তার। নদীপথে চলতে হলে নৌকা পাওয়া যায় না। বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় বিপদে।
সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি বিগত বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যান চলাচল বন্ধ, পায়ে হেঁটে যেতেও হিমশিম খেতে হয়। আমি উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করছি রাস্তাটি মেরামতের জন্য। প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, রাস্তাটি আমাদের এলজিইডির আওতাভুক্ত। এই রাস্তাটি ২০২২ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর থেকে আমরা প্রচেষ্টা করি মেরামত করার। এ বছরও আমরা মেনটেনেন্স খাতে দিয়েছিলাম। এলজিইডির হেডকোয়ার্টার প্রকল্প পাস করেনি বিধায় রাস্তাটির কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, বিগত বছরের বন্যায় উপজেলার অনেক রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে জামালগঞ্জ জেলা পরিষদের খেয়াঘাট থেকে দক্ষিণ কামলাবাজ-নয়াহালট রাস্তাটির বেহাল দশা। এবিষয়ে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছি। মেরামতের জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল কিন্তু টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় পাস হয়নি। নতুন করে আবার আরসিআইপি২ প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাস্তার বেহাল দশার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত রাস্তাটির কাজ শুরু হবে।