শহীদনূর আহমেদ ::
সিন্ডিকেটের কারসাজিতে লাগাম টানা যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের। কয়েক মাসের ব্যবধানে বাজারের সব থেকে কম দামের খাদ্যপণ্যটি এখন চোখ রাঙাচ্ছে। আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে আলুর দাম। দেড় মাস আগেও ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া আলুর কেজি এখন স্থানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। অপরদিকে, পেঁয়াজের বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। উপজেলা কিংবা গ্রামের বাজারের অবস্থা আরো খারাপ। খুচরা বাজারে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। গেল কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলেও সোমবার একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের এমন লাগামহীন দামে ক্ষোভপ্রকাশ করছেন ভোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় মাত্র দুই দিনেই পণ্যটির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
সোমবার সরেজমিনে সুনামগঞ্জ শহরে একাধিক পাইকারি ও খুচরা বাজার পরিদর্শন করে পেঁয়াজের দামের তারতম্য পাওয়া যায়। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। আলফাত স্কয়ার এলাকার হৃদি ভেরাইটিজ স্টোরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ৯০ টাকা। এর বিপরীতে রহমান কনফেকশনারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা নেয়া হচ্ছে ভোক্তাদের কাছ থেকে। গৌরাঙ্গ স্টোরে প্রতি কেজি ১১০ টাকা, পশ্চিম বাজারের জয় স্টোরে ১২০ টাকা রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম।
পেঁয়াজের দামে এমন তারতম্যের বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরাঙ্গ স্টোরের স্বত্বাধিকারী গৌরাঙ্গ দেব বলেন, পেঁয়াজের কোয়ালিটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া আজকে বাজারে দাম বেড়েছে। আমরা পাইকারি কিনে আনছি ১০৫ টাকা কেজিতে। তাই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
পশ্চিম বাজার এলাকার পাইকারি দোকান মেসার্স জীবন আলীতে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। গুদামে যে পেঁয়াজ রাখা হয়েছে তা কয়েকদিন আগে আমদানি করা হয়েছে। যার দাম তুলনামূলক কম থাকলেও গুদামজাত পেঁয়াজ নতুন দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি দোকানের ম্যানেজার আলী আকবর।
পাইকারি দোকান মেসার্স মোল্লায় পাইকারি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা কেজি দরে। এই দোকানের ম্যানেজার জানান, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় এলসিতে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তাই নতুন করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার সাথে সাথে কোথাও কোথাও গুদামের পুরাতন পেঁয়াজ নতুন দামে বিক্রি করার কথাও জানান একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী।
এদিকে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।
পৌর শহরের হাছননগর এলাকার বাসিন্দা এরশাদ মিয়া বলেন, গতকালও পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। হঠাৎ করে আবার পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই আজ বেশি দরে কিনেছেন। এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষকে পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।
ক্রেতা নূরজাহান বেগম বলেন, ১১০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। আমাদের মতো গরিব মানুষ এখন বিপদে আছে। তিনি বলেন, টিভিতে দেখি পেঁয়াজের বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের সুনামগঞ্জেও এরকম অভিযান পরিচালনা জরুরি।
সুনামগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে সারাদেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এখানে স্থানীয় ব্যবসায়িদের হাত নেই। তবে কোথাও পেঁয়াজ মজুদ করে রেখে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগে পেলে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।