শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ‘অজ্ঞান পার্টি’র সদস্যরা। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় এই সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত শুক্রবার অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েন শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের ওয়াহিদুর নামের এক কিশোর। সিলেট বাসস্যান্ড থেকে লোকাল বাসে করে সুনামগঞ্জ আসছিলেন তিনি। পথিমধ্যে বাসে যাত্রী ছদ্মবেশে থাকা অজ্ঞান পার্টির এক সদস্য তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে কোমল পানীয়র সাথে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে কিশোর ওয়াহিদুরের সাথে থাকা স্মার্টফোন ও নগদ টাকা লুটে নেয়। শান্তিগঞ্জের পাগলা বাজার এলাকায় ভুক্তভোগী কিশোরকে অচেতন অবস্থায় রেখে পালিয়ে যায় অজ্ঞান পার্টির ওই সদস্য। পরবর্তীতে স্থানীয় দ্যা ওয়েলফোর ফ্যামেলি নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সাহায্যে ভিকটিমকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে সুনামগঞ্জগামী বাসে থাকা এক শিক্ষার্থীকে কোমল পানীয়র সাথে চেতনাশক ওষুধ সেবন করিয়ে মোবাইলফোনসহ টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়ে ভিকটিমকে পাগলাবাজার এলাকায় ফেলে যায় অজ্ঞানপার্টির সদস্য। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শান্তিগঞ্জ এলাকার জয়কলস ইউনিয়নের ডুয়িংরা গ্রামের বাসিন্দা।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যাত্রীবাহী বাসে অজ্ঞানপার্টির এমন তৎপরতায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ভুক্তভোগী কিশোর ওয়াহিদুর বলেন, আমি সিলেট বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে করে সুনামগঞ্জ আসছিলাম। ২০-২৫ বছরের এক যুবক আমার পাশের সিটে বসে। সে বার বার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। আমি কথা না বলতে চাইলেও সে আমাকে চিনে বলে জানায়। সে বলে তার বাড়ি শান্তিগঞ্জের ওদিকে। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে তার সাথে কথা বলতে হয়। মাঝ রাস্তায় আসার পর সে ‘টাইগার’ পান করার কথা বলে। আমি বার বার না করি। এক পর্যায়ে সে আমাকে জোর করে দুই চুমুক খাইয়ে দেয়। এরপর আমার ঘুম চলে আসে।
দ্যা ওয়েলফেয়ার ফ্যামেলির সভাপতি ওবায়দুল হক মোনেম বলেন, আমরা ওয়াহিদুরকে অচেতন অবস্থায় পাই। প্রথমে পরিচয় জানা ছিলনা। সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার পরিবারের খোঁজ মিলে। পাগলাবাজার এলাকায় এই নিয়ে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা সুনামগঞ্জের বাসিন্দা। তারা সংঘবব্ধ। এরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সকল এলাকা সম্পর্কে জানে। যাত্রীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তাদের কাছ থেকে সব কেড়ে নেয়।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টির একটি সংঘবব্ধ চক্র সিলেট বাসস্ট্যান্ড ও সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচলরত পরিবহনকে প্রতারণার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদাসীনাতা, যাত্রীদের অসচেতনতা ও আইনশৃংখলাবাহিনীর নজরদারির অভাবে তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। তবে যারা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়লে অনেকে ঝামেলা এড়াতে মামলা করে না। আবার মামলা বা গ্রেফতার হলেও স্বল্প সাজা ও জামিনে বের হয়ে যায়। এসব প্রতারণা প্রতিরোধে আইন কঠোর হওয়া উচিত। তাহলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমে যেত।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাইদ বলেন, আইনশৃংখলাবাহিনীর তৎপরতায় অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ প্রতারক চক্রের প্রবণতা কমে আসছে। তারপরও কিছু ঘটনা ঘটছে এটি অনাকাক্সিক্ষত। ভিকটিম যদি আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন আমরা এটি নিয়ে কাজ করবো।