1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:২১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শাল্লায় সৌরবিদ্যুৎ না নিয়েও কিস্তির জন্য জেল খাটলেন দুই হতদরিদ্র!

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি ::
দুর্গম উপজেলা শাল্লায় কয়েকটি এনজিওর কাছ থেকে কিস্তিতে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে মূল্য পরিশোধ করার পরও হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রকৃত পাওনাদার ছাড়াও নিরীহ ও হতদরিদ্র মানুষকেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। হাতকড়া পরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জেলে। অনেককে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে মানসিক নির্যাতনও করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ফোনে স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বললে কোনও ধরনের তথ্য দিতে তারা বাধ্য নন বলে সাফ জানিয়ে দেন। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে শাল্লা উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জানান, ২০২০ সালের দিকে শাল্লা, দিরাই ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় আরএসএফ ও গ্রামীণ শক্তিসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা কিস্তিতে গরিব গ্রাহকদের কাছে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বকেয়া টাকা উত্তোলন করতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। তবে এর অনেক আগেই তারা কিস্তিতে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করে দিনমজুর ও হতদরিদ্র পরিবারকে। যারা তাদের কাছ থেকে সৌর প্যানেল নিয়েছিলেন তারা কিস্তি পরিশোধ করার পরও তাদের অনেকের টাকা পাস বইয়ে তোলা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। যার ফলে যেসব গ্রাহকরা টাকা পরিশোধ করেছেন তারা জানতেন না তাদের নামে অফিসের রেজিস্টারে বকেয়া রয়ে গেছে। সম্প্রতি আরএসএফ নামের সংগঠনটি প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জনের নামে বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আইনী নোটিশ দেয়। প্রায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। গ্রামীণ শক্তি নামের প্রতিষ্ঠানটিও এভাবে হাজারও মানুষকে আইনী নোটিশ দেয় এবং মামলা ও ওয়ারেন্ট ইস্যু করে অনেককে গ্রেপ্তার করেও নিয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে এমন একাধিক নিরপরাধ মানুষ পাওয়া গেছে যারা সৌর বিদ্যুৎ না নিয়েও আইনী নোটিশ, ওয়ারেন্ট ইস্যু পেয়েছেন। অনেককে ওয়ারেন্ট বলে গ্রেপ্তার করিয়েও নেওয়া হয়েছে। অসহায় মানুষজন সুদে ঋণ এনে টাকা দিয়ে জামিনে মুক্তি লাভ করেছেন।
আরএসএফ-এর ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা চৌধুরী আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, যারা আমাদের কাছ থেকে সৌরপ্যানেল নিয়ে টাকা পরিশোধ করেননি এমন ৪ হাজার ৫০০ জনকে আমরা আইনী নোটিশ দিয়েছি। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ জনের মতো লোক পাওনা টাকা জমা দিয়েছেন। প্রায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে আমরা মামলা দিয়েছি। কিছু ওয়ারেন্টও ইস্যু হয়েছে। তবে আমরা যা করছি আইনী প্রক্রিয়ায় করছি। কাউকে হয়রানি করছিনা।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরস্থ আরএসএফ অফিস ও গ্রামীণ শক্তির অফিসে গিয়ে দেখা যায় অফিস তালাবদ্ধ। দুই কক্ষের একটি বাসায় গ্রামীণ শক্তি ও এই অফিসের কার্যালয়। সামনে কলাপসিবল গেইটের সঙ্গে সাইনবোর্ড ঝুলানো। তাদের নম্বরে যোগাযোগ করলে আরএসএফ কর্মকর্তা আকবর হোসেন বলেন, আমি কোন তথ্য দিতে বাধ্য নই। পরে তিনি ঢাকা অফিসের একটি নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
শাল্লা উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী আশীষ রায় বলেন, আমি অনেক আগে ৩২ হাজার টাকায় একটি সৌর প্যানেল নিয়েছিলাম। সম্পূর্ণ কিস্তি পরিশোধ করার পর তারা আমাকে গিফট দিয়েছিল একটি ছাতা। এখন আমার নামে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছে ৮ হাজার টাকা পায় বলে। আমার মতো অনেকের কিস্তির টাকা নিয়ে তারা রেজিস্টারে তুলেনি। অসচেতন যারা তাদের পাস বইয়ে তুলেনি। এখন আইনী নোটিশ ও ওয়ারেন্ট পেয়ে সবাই হতাশ।
শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ডুমড়া গ্রামের দিনমজুর কৃপেন্দ্র দাস বলেন, আমার স্ত্রী কয়েক মাস আগে মারা গেছে। দিদা মারা গেছেন কয়েকদিন আগে। দিদা মারা যাবার পরদিন রাত আড়াইটায় আমাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রামীণ শক্তির কাছ থেকে আমি সৌরবিদ্যুৎ নেইনি। আমি কখনো সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারও করিনি। পরে আমি ৬ হাজার টাকা জমা দিয়া জামিনে আসি। আমি গরিব মানুষ, আমার প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হইছে। পরে কম্পানির ভুল হওয়ায় উকিল রাধাকান্ত সূত্রধর বাবু আমাকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে বলেছেন ভুল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার টাকা পয়সা নাই। নাইলে আমারে হয়রানি করার প্রতিবাদে আমি তারার বিরুদ্ধে মামলা করতাম।
একই গ্রামের দরিদ্র কৃষক সুজন চন্দ্র দাস বলেন, আমি গ্রামীণ শক্তি কেন কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই কিস্তিতে সৌরবিদ্যুৎ নেইনি। কিন্তু আমার নামে মামলা দিয়ে ওয়ারেন্ট নিয়ে এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছিল। আমি প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ করে জামিন নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, জামিন নিয়ে এসে খোঁজ নিলাম আমাদের গ্রোমে রৌয়া গ্রামের সুবীর চন্দ্র দাসের ছেলে সুজন চন্দ্র দাস গোবিন্দপুরের অবিনাশ বাবুর বাসায় ডুমড়া গ্রামে ভাড়া থাকতো। সে সৌর বিদ্যুৎ নিয়েছিল। এখন তার বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে আমাকে হয়রানি করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে উকিল সাব (রাধাকান্তু সূত্রধর বাবু) বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তারও কোনও খবর নাই। আমি অন্যায়ভাবে জেল খাটলেও ক্ষতিপূরণ পাইনি।
দুটি প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাধাকান্ত সূত্রধর বলেন, নামের প্রিন্টিং ভুলের কারণে আরেকজনের নামে ওয়ারেস্ট ইস্যু করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। আমার প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে এই ভুল সংশোধন করে নিয়েছে। একজনকে আমরা আর্থিক ক্ষতিপূরণও দিয়েছি। তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনার পর মামলা বা ওয়ারেন্টের বদলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতায় বকেয়া কিস্তি আদায়ের জন্য বলা হয়েছে।
গ্রামীণ শক্তি কোম্পানীর সুনামগঞ্জের স্থানীয় প্রতিনিধি আনোয়ার মিয়া জানান, আমি শাল্লায় মাত্র ৭টি মামলা করেছি। ৩টা মামলায় ওয়ারেন্ট হইছে। এর মধ্যে ভেজাল লাইগ্যা গেছে। ভাই আমি উকিল সাবকে নিয়া আপনার সঙ্গে দেখা করবো বলে তিনি ফোনলাইন কেটে দেন।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব বলেন, বহু আগে বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে শাল্লার অনেক হতদরিদ্র মানুষ এখন আইনী নোটিশ ও মামলার ওয়ারেন্ট পেয়ে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে আছেন। অনেক নিরপরাধ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমাকে কেউ লিখিতভাবে বিষয়টি না জানালেও মৌখিকভাবে অনেকে জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমন হয়রানি বন্ধ হওয়া উচিত। এ বিষয়টি উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও উত্থাপিত হয়েছে।
শাল্লা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার থানায় প্রায় ৩০০ মানুষের নামে ওয়ারেন্ট এসেছিল। কোর্টের কিছু ওয়ারেন্ট আমরা তামিল করেছি। অধিকাংশ মানুষই গরিব। অনেক আগের ঘটনা এগুলো। তারা জানতই না। আমি বিষয়টি এসপি স্যারের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আর যাতে কারো নামে ওয়ারেন্ট না ইস্যু করে এজন্য আমরা তাদেরকে বলেছি। তারা বলেছে ওয়ারেন্ট না দিয়ে একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের কিস্তি আদায় করবে।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com