স্টাফ রিপোর্টার ::
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রায় ৩০০ দৌড়বিদ সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়ে দৌড়েছেন। দৌড়বিদদের মধ্যে ১০ বছরের শিশু থেকে ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধরাও ছিলেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় সুনামগঞ্জ শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে দোয়ারাবাজারের আমবাড়ি বাজারের উদ্দেশ্যে ম্যারাথন শুরু হয়। ১০ ও ২১ কিলোমিটার ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা দৌড়ে অংশ নেন। সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটি নামের একটি সংগঠন এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
এদিকে ম্যারাথন চলাকালে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে দৌড়বিদদের জন্য স্যালাইন, পনি, হাল্কা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত যাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় সেজন্য অ্যাম্বুলেন্সও রাখা হয়েছিল। হাফ ম্যারাথন শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীদের সবাই দৌড়ে অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
আয়োজকরা জানান, সুস্থ শরীর ও মনের জন্য এমন আয়োজনের ডাক দিয়েছিলেন তারা। এতে সারাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৩০০ জন অংশ নেন। ৪৫ বছরের বেশি বয়সীরা ১০ কিলোমিটারের দৌড়ে এবং এর চেয়ে কম বয়সীরা ২১ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। হাফ ম্যারাথনে ১০ কিলোমিটারের দৌড়ে প্রথম হয়েছেন দীপ তালুকদার, দ্বিতীয় আমির হোসেন ও তৃতীয় কাওসার আহমদ এবং ২১ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম হন গোলাম রাহাত, দ্বিতীয় আশরাফুল আলম ও তৃতীয় ফাহিম আহমদ। ৪৫ বয়সী ঊর্ধ্ব বয়সীদের ১০ কিলোমিটার দৌড়ে প্রথম হন ওয়াহাব খান, দ্বিতীয় বিশ্বজিৎ দাশ, তৃতীয় হন জিয়া উদ্দিন। দৌড় শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটির সংশ্লিষ্টরা।
হাফ ম্যারাথনে অংশ নিতে সিলেট থেকে আসা এমদাদুল ইসলাম বলেন, আধুনিক যুগে সবাই কর্মব্যস্ত। কাজে ডুবে থাকার কারণে নিজের শরীরের দিকে থাকানোর সময় নেই। ভালো খাবার ও ভালো পরিবেশে থাকার পরও যে কারণে অজান্তেই শরীরে রোগ বাসা বাঁধছে। শরীর ও মন নিয়মিত ঠিক রাখতে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে দৌড়ানো গেলে সবাই সুস্থ থাকবে। তাই খবর পাবার পর বন্ধুদের নিয়ে আমরা দৌড়ে অংশ নিয়েছি।
পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া দুই ছেলে রিয়ান আলম ও রায়হান আলমকে সঙ্গে নিয় ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন সিলেটের বাসিন্দা শাহ আলম। লাফার্জ সিমেন্ট কো¤পানিতে চাকরি করেন তিনি। শাহ আলম বলেন, সুস্থ থাকাটা জরুরি। পরিবারের সবাইকে নিয়েই হাঁটি, দৌড়াই। সিলেটের বিভিন্ন আয়োজনে ছেলেরা অংশ নেয়। তাঁদের আগ্রহে সুনামগঞ্জে এসেছি। রিয়ান, রাইয়ানও সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে অংশ নিয়ে খুশি।
ঢাকা থেকে আসা শিক্ষার্থী ঝরা বলেন, আমি একেবারে নতুন, দুইমাস হয় দৌড় শুরু করেছি। পরিবারের উৎসাহে সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি।
৬৯ বছর বয়সী শচীন্দ্র চন্দ্র অধিকারী ১০ কিলোটার দৌড়ে এসে অন্যদের সঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণে। জানালেন দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর সিলেট ফিটনেস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন। শুরু করেন দৌড়ানো। এখনো সুস্থ আছেন। সুনামগঞ্জ ম্যারাথনে ৪৫ উর্ধ্ব বয়সীদের ১০ কিলোমিটারের দৌঁড়ে তিনি চতুর্থ হয়েছেন।
পাশে বসা সিলেট ফিটনেস ক্লাবের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা ৪০জন সুনামগঞ্জ হাফ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি। শচীন্দ্র অধিকারী আমাদের প্রেরণা।
সিলেট শহরের শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা রুনা বেগম বলেন, এক বছর হয় নিয়মিত হাঁটেন, দৌড়ান। সুস্থ থাকতে হলে সবার হাঁটা উচিত।
ঢাকার জেসমিন আক্তার ২০১৭ সাল থেকে দৌড়ান। দীর্ঘদিন একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করেছেন, এখন ব্যবসা করেন। এ পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার ম্যারাথনের ৭টিতে অংশ নিয়েছেন। ১০ কিলোমিটারে অসংখ্যবার।
তিনি বলছিলেন, সকালে দৌড়ালে সারাদিন আপনার ভালো যাবে। শরীরে কোনো ক্লান্তি, অবসাদ ভর করবে না। শারীরিক, মানসিক শক্তি অনেক বেড়ে যায়।
সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটির সদস্যসচিব আবু সালেহ সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রানারদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে। তিনি বলেন, মানুষের শরীর ও মন সুস্থ রাখতে আমরা এমন আয়োজনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। আমরা প্রথম ডাকেই অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদানসহ আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করেছি। আগামীতেও আরো বড়ো পরিসরে আমরা দৌড়ের আয়োজন করবো।
সুনামগঞ্জ রানার্স কমিউনিটির প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, সুনামগঞ্জে এটাই প্রথম হাফ ম্যারাথনের আয়োজন। আমি নিজেও একজন রানার। এই হয় ম্যারাথন আয়োজনে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পৌর মেয়র নাদের বখতসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন সহযোগিতা করেছেন, আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।