1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:০২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

গাজায় মানবিক বিপর্যয় : তারপরও মানবাধিকারের ছড়ি ঘুরায় যুক্তরাষ্ট্র

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক ::
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণ ও অবরোধের ফলে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের অভাবে মানুষ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। চিকিৎসা উপকরণ ও বিদ্যুতের সংকটে চিকিৎসাসেবা বন্ধের উপক্রম। বিদেশি নাগরিক ও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ফিলিস্তিনিদের অবরুদ্ধ গাজা ত্যাগ ও জরুরি ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ দিতে মিসরের রাফা সীমান্ত ক্রসিং খোলার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার শঙ্কা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্তে এসে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ প্রবেশের চেষ্টা করেছিলো ২০১৭ সালে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক মুহূর্ত দেরি না করে সীমান্ত খুলে কক্সবারের উখিয়ায় জায়গা করে দিয়েছিলো প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। তারও আগে আসা রোহিঙ্গ মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১১ লক্ষ রোহিঙ্গার বাস। প্রশ্ন হলো- কার মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে যুক্তরাষ্ট্র? মানবাধিকার লঙ্ঘন করা দেশটি কখন মানবাধিকার ইস্যুতে হাজারো মানুষ মরে গেলেও চুপ থাকে।
কেন মার্কিনদের টানা হচ্ছে? :
শুরু থেকেই ফিলিস্তিন ইসরাইলি ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। এই দফাতেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তাদের দৃঢ় ও অটুট সমর্থনের কথা জানান। হামলার পরপরই বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে ইসরায়েলের প্রতি তাদের এই প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন। ইসরায়েলের সমর্থনে বিমান বহনকারী রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ও মিসাইল ক্রুজার যুদ্ধবিমান ও চারটি মিসাইল বিধ্বংসী যান ইসরায়েলের কাছে ভূমধ্যসাগরে পাঠানো হয়। সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলকে আরও অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয় হোয়াইট হাউজ। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে তাদের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নতুন গোলাবারুদ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
অথচ গাজায় ঘটে চলেছে একের পর এক মানবিক বিপর্যয়। সর্বাত্মকভাবে গাজা উপত্যকা অবরোধে ইসরায়েলি ঘোষণার মধ্যেই ৯ অক্টোবর গাজাবাসীদের জন্যে মানবিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয় অস্ট্রিয়া ও জার্মানি। সেদিন অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সজেন্ডার শেলেনবার্গ জানান, দুই কোটি ডলারের সহায়তা সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত ৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে, আমেরিকার চোখ বন্ধ :
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলা ও বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত সেখানকার মানুষ। প্রাণভয়ে এর মধ্যে চার লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা উপত্যকায় মানুষ গণহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এই সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। ওসিএইচএ বলেছে, গাজার অনেক মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন। সেখানে পানি সরবরাহব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। এতে বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। গাজা উপত্যকার দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং এটি ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত। সীমান্তের বড় অংশ রয়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিসরের সঙ্গে। প্রায় ২২ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে এখানে, যাতে এটা হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি।
গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ করার পর থেকে অনেক বিদেশি নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারী ফিলিস্তিনের গাজা ছাড়তে মিসরের রাফা ক্রসিংয়ে ভিড় জমাতে শুরু করে। এই ক্রসিং হয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে ত্রাণ সহায়তা বহনকারী শতাধিক ট্রাকও। প্রথমদিকেই মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শোকরি বলেন, রাফা ক্রসিং খুলতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। কায়রো দাবি করেছে, রাফা ক্রসিংয়ের মিসর অংশে কার্যক্রম চলমান থাকলেও ইসরায়েলি বোমা হামলায় ফিলিস্তিন অংশের অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাতের এক সপ্তাহ পার না হতেই রাফাহ সীমান্তে দেয়াল তুলেছে মিসর। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগেও এই সীমান্ত দিয়ে পারাপার করা হতো। কিন্তু হামলার পর এটি বন্ধ রাখে ইসরায়েল। এবার সেখানে দেয়াল তুলল মিসর। এর ফলে গাজা অবরুদ্ধ হয়ে এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এই রক্ত, সংঘাত, মৌলিক অধিকার অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যখন ফিলিস্তিনের মানুষ কেবল নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো তখনই ১৭ অক্টোবর এক হাসপাতালে হামলা করা হলে ৫শ মানুষ নিহতের খবর পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের প্রশ্ন- এই আমেরিকা গাজায় মানুষ মরলে দেখতে পায় না, বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বুঝেও রোহিঙ্গাদের দেশের অভ্যন্তরে কাজের সুযোগ দিতে হবে বলে গো ধরে, প্রত্যাবাসনের কোন উদ্যোগে কার্যকর ভূমিকা রাখে না; এরাই আবার বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘরে কথা বলে স্যাংশনের হুমকি দেয়?
অথচ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের সেদিন এতো মানুষের জায়গা করে দিতে গিয়ে ভাবেননি পরবর্তীতে কী হবে। তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যা¤প পরিদর্শন করে বলেছিলেন, এ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া ও খাওয়ানো কোনো কঠিন কাজ নয়। নেদারল্যান্ডসের নামকরা ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন সাময়িকী তাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছিল ‘শেখ হাসিনা : মাদার অব হিউম্যানিটি’।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে লাখ লাখ নির্যাতিত মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে জে (অব) আব্দুর রশীদ বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে তথাকথিত আরসা নাটকের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ তাদের সাগরে ভাসমান রোহিঙ্গা জাহাজকে ফের সাগরে ঠেলে দিতে পারেনি। এরপরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফেরানোর বিষয়ে বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কিন্তু নানাবিধ প্রেসক্রিপশন তারা দিয়ে গেছে। এখন এসে তারা দেশের অভ্যন্তরে কাজের সুযোগ তৈরি করে দিতে বলছে। সেটা আরও মারাত্মক বিপদে ফেলবে বাংলাদেশকে। তারা বাংলাদেশের ভালো চায় না বুঝা যাচ্ছে, তারা আসলে রোহিঙ্গাদেরও ভালো চায় না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com