1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

খুলছে ছাতক-দোয়ারাবাসীর স্বপ্নদুয়ার

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩

শহীদনূর আহমেদ ::
আজ বৃহস্পতিবার ছাতকে নবনির্মিত সুরমা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে খুলে যাবে ছাতক-দোয়ারাবাজার উপজেলাবাসীর বহুল প্রতিক্ষিত স্বপ্নদুয়ার। দুপুর সাড়ে ১২টায় একযোগে দেশের ১৫০টি সেতুর সাথে ছাতক সুরমা সেতুটিও ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর থেকেই জনসাধারণের চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দিবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বহুদিনের প্রত্যাশিত সেতুটি উদ্বোন হওয়ায় ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। একই সাথে খুলে যাবে জেলার উত্তরে উন্নয়নের দ্বার। ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগে যুক্ত হবে দোয়ারাবাজার উপজেলা। এই এলাকার উৎপাদিত পণ্যসহ চাষাবাদকৃত সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত পৌঁছে যাবে। এতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০২.৬১ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে মেসার্স জন্মভূমি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। জানাযায়, ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হন বিএনপি সরকারের আমলে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের আওতায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। অর্থ সংকটে দীর্ঘদিন প্রকল্পটির কাজ বন্ধ হয়ে গেলে ২০১৬ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় সেতুর অবশিষ্ট কাজ ও সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। অর্থের সংকট কাটিয়ে নতুন বরাদ্দে ২০১৭ সালে ফের সেতুর কাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর নির্মাণকাজ শেষ করে আলোর মুখ দেখে প্রকল্পটি।
সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পটভূমি থেকে জানাযায়, গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা সড়ক (জেড-২৮০২)। সড়কটি সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৩তম কিলোমিটারে গোবিন্দগঞ্জ গ্রোথ সেন্টার হয়ে ছাতক উপজেলা ও ছাতক ফেরিঘাট পার হয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ২৭কি.মি.। ছাতক একটি শিল্প এলাকা। প্রতিদিন অসংখ্য ভারী যান বাহন ও লোডেড ট্রাক এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এছাড়াও ছাতক একটি গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকা। সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে সুরমা নদী অবস্থিত। বর্তমানে সুরমা নদীতে ছাতক ফেরী ঘাট অবস্থিত। সড়কের বর্ণিত সুরমা নদীতে অনেক পূর্বেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় কিন্তু প্রকল্পটি ১ম পর্যায়ে অসমাপ্ত হিসাবে প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। সুরমা নদীটি ছাতক উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর অপর পাড়ে ১২ কিলোমিটার দূরে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর এবং টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড ও জনবহুল এলাকা অবস্থিত। দোয়ারাবাজর এলাকার জনসাধারণকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও জেলার যে কোন উপজেলায় যাতায়াত করতে সুরমা নদী অর্থাৎ ছাতক ফেরী পার হতে হয়। সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘবে ২০০৬ সালে সেতুর সামান্য কিছু নির্মাণকাজ হলেও পরবর্তীতে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে হাওরবেষ্টিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের যতায়াত ব্যবস্থা সহজ এবং এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তৎকালীন ও বর্তমানের ছাতক-দোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সুরমা নদীর উপর ছাতক সেতুর অবশিষ্ট কাজ ও সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেতুটি ছাতক বাজারের যানজট এড়িয়ে নদীর উভয় পার্শ্বে ২.৬২২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক অন্তর্ভুক্ত করে বর্তমান ফেরী ঘাটের ১ কিলোমিটার দক্ষিনে ছাতক সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর ছাতক প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়কে ৫টি আরসিসি বক্স কালভার্ট (১টি আন্ডারপাস সহ) ও ১টি আধুনিক ক¤িপউটারাইজ টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দোয়ারাবাজার প্রান্তে ২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট (১টি আন্ডারপাসসহ) নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সেতুর উপর দৃষ্টিনন্দনের জন্য বৈদ্যুতিক বাতির সংস্থান রাখা হয়েছে। সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের স্থায়িত্বের জন্য সিসি ব্লক দ্বারা ¯ে¬াপ প্রটেকশনের কাজ করা হয়েছে। সেতু ও টোল প্লাজার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য টোল অফিসসহ আনসার ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে বহুল প্রতিক্ষিত ছাতক সুরমা সেতু উদ্বোধনের খবরে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার উত্তরপূর্বাঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সরকারের শেষ সময়ে এমন উপহার দেয়ায় তারা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।
এলাকাবাসী জানান, সুরমা সেতু উদ্বোধনের ফলে উত্তর সুরমার প্রায় ৪ লাখ মানুষের যোগাযোগের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। এলাকায় আরও অনেক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠবে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পথও সুগম হবে। ছাতক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা।
স্থানীয়রা আরও জানান, ছাতক উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুরমা নদী। সুরমা নদীর দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে দেশের বৃহৎ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ‘লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট’। পাশাপাশি ছাতক সিমেন্ট কারখানা এবং দোয়ারাবাজারে রয়েছে ‘টেংরাটিলা গ্যাস ফিল্ড’। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের যাতায়াতের পাশাপাশি চলাচলের ক্ষেত্রে এলাকার মানুষ সরাসরি ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। সুরমা নদীর উত্তর প্রান্তে ছাতকের ইসলামপুর ও নোয়ারাই এবং দোয়ারাবাজারের দোয়ারাবাজার সদর, নরসিংপুর, বাংলাবাজার, বোগলা, লক্ষ্মীপুর ও সুরমা ইউনিয়নের অবস্থান। এলাকাবাসী জানান, দোয়ারার বাংলাবাজার এলাকায় প্রচুর শাকসবজি উৎপাদিত হয়। ব্রিজটি হওয়ায় এসব ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের পথ সুগম হবে। বিশেষ করে ছাতকের সোনালী চেলা এবং দোয়ারাবাজারের বাঁশতলা দিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথরসহ বিভিন্ন পণ্য নদীপথে আমদানি-রপ্তানি হয়। সেতুটি চালুর ফলে সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যাবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেশের ১৫০টি সেতুর সাথ আজ ছাতক সুরমা সেতু উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের পর থেকে সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রকল্পটি মাঝ পথে থেমে ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করেছি। তিনি আরও বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাওরবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন এই ছাতক সুরমা সেতু যা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় হাওর অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ দেশের যে কোন অঞ্চলে সরাসরি সড়ক পথে যাতায়াত করতে পারবেন। সুষ্ঠু ও অবাধ যাতায়াতের জন্য সেতুটি নির্মিত হওয়ায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিদ্যমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হলো এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে যুক্ত হল সফলতার আরও একটি নতুন মাত্রা।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com