১৮ বছরের বেশি ৫০ বছরের মধ্যে যে কেউ চাঁদা দিয়ে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন। সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। পেনশন স্কিমের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে থাকা ১০ কোটি মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ আগস্ট পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত দুই মাসে সুনামগঞ্জ জেলায় মাত্র ১২জন পেনশন স্কিমের আওতায় এসেছেন। প্রচার-প্রচারণা সেভাবে না হওয়াই এর মূল কারণ।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম সরকারের দায়বদ্ধতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, বেশী সংখ্যক মানুষকে আমাদের স্কিমের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আজকের আলোচনা সুশীল সমাজের যারা উপস্থিত আছেন তাদের মধ্যেই বিষয়টা স্পষ্ট না। আপনি যদি আপনার বাবা-মা সহ আত্মীয়-স্বজনকে স্কিমের আওতায় নিয়ে আসেন তাহলেই এটা প্রচার পাবে। শুধু সরকারের পক্ষে এটা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।
জনউদ্যোগ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন, সোনালী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আব্দুছ ছালাম মোহাম্মদ জুবের, কবি ও লেখক সুখেন্দু সেন, সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য, সুনামগঞ্জের খবর সম্পাদক পঙ্কজ দে, দিগেন্দ্র বর্মণ সরকারি কলেজের শিক্ষক সবিতা বীর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খলিল রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ।
সভায় বক্তারা বলেন, প্রচার যে শুধু সরকারকেই করতে হবে তা কিন্তু নয়, আমাদের সকলকে সরকারে কল্যাণমূলক এই কর্মসূচিকে সফল করতে কাজ করতে হবে। সরকার-জনপ্রতিনিধি-সোনালী ব্যাংক-সুশীল সমাজ সহ আমাদের দায়িত্ব আশেপাশে যারা আছেন তাদের সুফল বুঝিয়ে স্কিমের আওতায় আনা। সবাই মিলে কাজ করলে অবশ্যই আমরা সাকসেসফুল হবো। যাকে নমিনি করা হবে সেই সুবিধাভোগী হবে উল্লেখ করে জানানো হয়, পরিবারের বাইরের কাউকে যদি নমিনি করা হয়- তাহলে সেই পাবে। এখানে একাধিক নমিনি করারও সুযোগ রয়েছে। অ্যাকাউন্ট খুলে পরপর তিন মাস যদি আপনি টাকা না দেন তাহলে ৪ নম্বর মাস থেকে আপনাকে জরিমানা দিয়ে অ্যাকাউন্ট চালু করতে হবে। জরিমানার টাকাও আপনার অ্যাকাউন্টে থাকবে। শুধু যিনি অ্যাকাউন্টধারী তাকে দায়বদ্ধ করার জন্য সরকার এই নিয়ম করেছে। যার অ্যাকাউন্ট তাকে মনে করিয়ে দেওয়া যে, আপনাকে এটা কন্টিনিউ করতে হবে। তবে যারা এই স্কিমের আওতায় আসবেন তারা সরকারের অন্য কোন সামাজিক স্কিমের আওতাভুক্ত থাকতে পারবেন না। যেমন- বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতায় অন্তর্ভুক্তরা এখানে আসতে পারবেন না। তবে কেউ যদি চান তবে যে কোন একটা বেছে নিতে পারবেন।
বর্তমানে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা এই চার ধরণের স্কিম চালু আছে উল্লেখ করে জানানো হয়, প্রবাস স্কিমটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। সুরক্ষা স্কিম রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি সহ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। আর সমতা স্কিম নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য। প্রবাস স্কিমে চাঁদার হার ৭ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা; প্রগতি স্কিমে ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা এবং সুরক্ষা স্কিমে ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। শুধু সমতা স্কিমে চাঁদার হার একটি, আর তা হচ্ছে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে চাঁদাদাতা ৫০০ ও সরকার ৫০০ টাকা করে দেবে। কোন ব্যক্তির কাছে চাঁদার টাকা নগদ জমা দেওয়া যাবে না। ব্যাংক, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে চাঁদার টাকা জমা দিতে হবে। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর তার ব্যাংক হিসাবে অথবা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মাসিক পেনশন দেওয়া হবে। চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মূল পেনশনধারীর বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। কেউ যদি অনলাইনে নিবন্ধন করতে না পারেন, তাহলে তিনি সোনালী ব্যাংকে গিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। ১৮ বছর বয়সে যিনি কর্মসূচিতে যুক্ত হবেন, তিনিই পাবেন সর্বোচ্চ সুবিধা। কেউ যদি অ্যাকাউন্ট করার ৫ বছর পর সরকারি চাকরির সুযোগ পান তাহলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়- সেক্ষেত্রে যেদিন একজন চাকরিতে জয়েন করবে তার আগের দিন পর্যন্ত জমাকৃত টাকা মুনাফা সহ পাবে। ১০ বছর পর সেটা উনি তুলে নিতে পারবেন। আবার কেউ স্কিম পরিবর্তন করতে চাইলে সেই সুযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে জানতে পারবেন আপনারা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন সেন রায়, সিনিয়র সাংবাদিক আকরাম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক অনুপ নারায়ণ তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চন্দন কুমার রায়, মানব চৌধুরী, দৈনিক কালবেলা প্রতিনিধি সজীব দে, গণমাধ্যমকর্মী মো. আনোয়ারুল হক, শিক্ষার্থী মৃন্ময় দাস প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন সুনামগঞ্জ জনউদ্যোগের সদস্য সচিব সাইদুর রহমান আসাদ। -সংবাদ বিজ্ঞপ্তি