হোসাইন আহমদ ::
শান্তিগঞ্জে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স জনবল সংকটে ধুঁকছে। এখানে ১৮ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন। বাকি ১৫টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে হ্যাচারিতে পোনা ও রেণু উৎপাদনে দায়িত্বরতরা হিমশিম খাচ্ছেন।
১৯৯৬ সালে সরকার দ্বিতীয় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশে মৎস্য স¤পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রেণু উৎপন্ন করে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা ছড়িয়ে দিতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় এই হ্যাচারি কমপ্লেক্স নির্মাণ করে। এটি ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সুনামগঞ্জ এবং কিশোরগঞ্জ জেলায় আরো দুটি কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়। সুনামগঞ্জ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সাবেক দক্ষিণ সুনামগঞ্জ বর্তমানে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জ এলাকায় ১৯৯৬ সালে ‘কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্স’ স্থাপিত হয়। এখানে রেণু ও পোনা উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ একর ভূমির উপর গড়ে তোলা এ হ্যাচারি কমপ্লেক্সের ১৩ একর জুড়ে ছোট-বড় ১৮টি পুকুর রয়েছে। এছাড়া একটি হ্যাচারি বিল্ডিং, চারটি সার্কুলার ট্যাংক, পাঁচটি সিস্টার্ন ট্যাংক, একটি ডরমেটরি হাউস, একটি গুদাম, একটি অফিস ভবন ও একটি আবাসিক ভবনসহ মৎস্য ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে।
জানা গেছে, এখানে সব মিলিয়ে বর্তমানে ১৮টি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ আছে। এর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৩ জন আছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন হ্যাচারি কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী ও একজন ফিশারম্যান কাম গার্ড। বাকি ১৫টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। মূল ফটকেও কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী, সচিব ও ডিজিকে লোকবল সংকট নিরসনের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হলেও নতুন লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় সংকট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে রেণুপোনা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচটি সার্কুলার ট্যাংক, চারটি সিস্টার্ন ট্যাংক অকেজো পড়ে আছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, ঘনিয়া, দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ, সিলভার, বিগহেড, গ্রাসকার্প, থাই সরপুঁটি, তেলাপিয়ার মধ্যে মনোসেক্স, তেলাপিয়া, গলদা চিংড়ি (জুবেনাইল) ইত্যাদি মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করার কথা থাকলেও লোকবল সংকটে তা করা হচ্ছে না।
জানা যায়, বর্তমানে হ্যাচারিটিতে আর্থিক সাল অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫০ কেজি রেণু, বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ উৎপাদনসহ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে অর্থাৎ মোট ১৯ লক্ষ ২ হাজার ৭৫ টাকা। বর্তমানে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে হ্যাচারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। হ্যাচারিটিতে বর্তমানে বহিরাগত জনবল দিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও হ্যাচারির ৩টি কোয়ার্টার ভবন, একটি আবাসিক কোয়াটার্স প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হ্যাচারিটির অধিকাংশ ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা, জানালা ভেঙে গেছে।
হ্যাচারিতে কর্মরত অফিস সহকারী আজিম জানান, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে হ্যাচারির কোয়ার্টারে বসবাস করি। দিনরাত নেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিলে হ্যাচারি কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে এবং এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।
কার্প হ্যাচারি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, হাওর এলাকায় মাছের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কাজ করছি। মাছ আমাদের জাতীয় স¤পদ। বর্তমানে একটি লাভজনক পেশা। মাছ উৎপাদনে হাওর এলাকায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন। সুনামগঞ্জ জেলা মাছ চাষের উর্বর ভূমি। সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেটের বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর উপজেলার লোকজন এখান থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করেন। লোকবল সংকট দূর হলে উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আরও বৃদ্ধি পাবে।