শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্নে হচ্ছে শব্দদূষণ। চালকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল এলাকায় কোনো বাছ-বিচার করছেন না। অযথা নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজাচ্ছেন হর্ন। এতে অতিষ্ঠ মানুষজন। তারা এসব বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
জানাযায়, হাইড্রোলিক হর্ন হচ্ছে উচ্চ মাত্রার শব্দ সৃষ্টিকারী বিশেষ হর্ন। আমেরিকান স্পিচ অ্যান্ড হেয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন (আশা) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মানুষের জন্য শ্রবণযোগ্য শব্দের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন শব্দ ছড়ায় ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত। এর স্থিতি ৯ সেকেন্ডের বেশি হলে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। দেশের শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে রাজধানীর মিশ্র (আবাসিক ও বাণিজ্যিক) এলাকায় দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ৬০ ডেসিবেল। এর চেয়ে উচ্চমাত্রার শব্দে শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, বিরক্তি সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটতে পারে।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অযথাই হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার অসহনীয় শব্দ সৃষ্টি করছে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকরা। এদের অনেকেই শহরের উচ্চবিত্ত শ্রেণির ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। উঠতি বয়সী এসব বাইকারদের মোটরবাইকের গতিও বেপরোয়া।
হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার সম্পর্কে একাধিক চালকের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বিধি সম্পর্কে তারা তেমন কিছু জানেনা। অনেকেই শখের বসে সাধারণ হর্ন বাদ দিয়ে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মোটরবাইক চালক বলেন, আমরা যে মোটরসাইকেল চালাই এটির সাথে সাধারণ হর্ণ বেমানান। তাই এই হর্ন ব্যবহার করি। হাইড্রোলিক হর্নে মোটরসাইলে চালাতে ভাব আসে। হর্ন চালালে ট্রাফিক পুলিশ বাধা দেয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই যুবক বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ বাঁধা দেয়নি।
শহরের হাসননগর এলাকার বাসিন্দা হোসেন আহমদ বলেন, মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক হর্নে আমরা অতিষ্ঠ। দিন নেই, রাত নেই, রাস্তায় এই বিকট শব্দ তোলা বাইক পথচলা মানুষের আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু যারা বাইক চালাচ্ছে, তারা বেপরোয়া। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা মতিন মিয়া বলেন, শুধু হাইড্রোলিক হর্নই নয়, অনেকে শোরুম থেকে বাইক কিনে নিয়ে আসার পর আসল সাইলেন্সার খুলে বিকট শব্দ হবে এমন সাইলেন্সার লাগিয়ে নিচ্ছে। বেপরোয়া চালকরা হাইড্রোলিক হর্ন ও সাইলেন্সারে বিকট শব্দ তোলে আতঙ্ক তৈরি করে। এসব বেপরোয়া বাইকারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, বখাটে বাইকাররা স্কুল শুরুর আগে এবং ছুটির পর বাইক নিয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। এরা হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের মাধ্যমে বিকট আওয়াজ সৃষ্টি করে। এদের উৎপাত দিন দিন বাড়ছে। এখনই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিদর্শক মহিবুর রহমান বলেন, হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিয়ে আমরাও বিপাকে আছি। কারা এই হর্ন ব্যবহার করে তাদের সম্পর্কে আপনার জানেন। তবে এনিয়ে আমরা অভিযান পরিচলনা করছি।
হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার ও বিক্রয় সম্পর্কে বিআরটিএর মোটরযান পরির্দশক সফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, আমরা গত মাসেও অভিযান করেছি। অনেক ট্রাক থেকে হাড্রোলিক হর্ন খুলে দিয়ে জরিমানা করেছি। তবে এখনো মোটরসাইলে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের তথ্য পাইনি। আগামীতে এ বিষয়ে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।