1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বাংলাদেশে মানবাধিকার চর্চা এবং ইইউ’র তথাকথিত মানবাধিকার শিক্ষা

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৩

ড. ফরিদুল আলম
নিজ ঘর না সামলে আজকাল পশ্চিমারা যেভাবে আমাদের রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার ইস্যুতে একের পর এক হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছে এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের নিজ দেশের কিছু মানুষ এবং সুবিধাভোগী চক্র বিদেশি শক্তিগুলোকে এ ধরণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। আজ কথা বলছি তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর অন্যতম কর্তাব্যক্তি আদিলুর রহমানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একটি বিচারিক আদালত কর্তৃক শাস্তি এবং এ বিষয় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)-র পার্লামেন্টে পাশকৃত প্রস্তাব, যেখানে তারা আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মজার বিষয় হচ্ছে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন খোদ ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য ম্যাক্সিমিলিয়ন ক্রাহ। সুযোগ পেলেই পশ্চিমারা আমাদের মাননাধিকার শেখাতে আসে এবং এটিকে আমাদের সাহায্যের বিনিময়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তাদের এই তথাকথিত মানবাধিকার চর্চার বিষয়টি কতটুকু স্ববিরোধী এর সর্বসাম্প্রতিক উদাহারণ হচ্ছে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যকার চলমান সংঘাতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী (সেই সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনে) কর্তৃক গাজা উপত্যকায় জাতিগত ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত বিষয়ে কোন কথা ইইউ-র কাছ থেকে এখন পর্যন্ত শুনিনি। প্রকারান্তরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের গতিবিধি দিয়েই কিন্তু তাদের মানসিকতাকে যাচাই করতে পারছি। সেই সাথে দশকের পর দশক ধরে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতে পশ্চিমারা সরাসরি ইসরাইলের পক্ষেই তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে আসছে।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলাম কর্তৃক সাধিত তা-বে সরকারের তরফ থেকে যে ভূমিকা নেয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে সরকার ভুলটি কোথায় করেছে, সেই প্রশ্নে না গিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী কিছু ব্যক্তির পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে তারা আসলে আমাদের দেশকে নিয়ে কি ভাবছে এবং কোন পর্যায়ে টেনে নামাতে চাইছে- বিষয়টি কিন্তু গভীর উদ্বেগের। আমরা যদি পাল্টা আমাদের দিক থেকে তাদের উল্টো জিজ্ঞেস করি, পশ্চিমা কোন দেশের স্বাভাবিক কর্মকা-ে যদি কোন অপশক্তি সাধারণ জনগণের অধিকারের বিপরীতে কাজ করে তাহলে সেদেশ বা দেশগুলোর সরকার কি করে থাকে? আমরা এরকম অনেক দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্যসহ অনেক ইউরোপীয় দেশে তাদের ভাষায় বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলার বিপরীতে বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে কখনও হামলাকারীদের পাকড়াও আবার কখনও হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়। কিছুদিন আগেও ফ্রান্সে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক হত্যা নিয়ে ব্যাপক বিদ্রোহ হয়েছে। দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু মুসলিম এবং কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের জবাবে কি আমরা কখনো ইইউ’র মানবাধিকার কমিশনকে সচেতনভাবে কোন ভূমিকা নিতে দেখেছি? দেখিনি।
বাংলাদেশের বিচারিক আদালতের রায়ে যিনি দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদ-ে দ-িত হয়েছেন তার অপরাধের মাত্রাটুকু যদি আমরা বিবেচনা করে দেখি তাহলেই বুঝতে পারব পশ্চিমা ইইউ কর্তৃক এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া কতটা অশোভন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের সময় তারা যে ধরণের নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, এতে করে পুরো ঢাকা প্রায় অচল হবার অবস্থা হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে বারবার তাদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সভা সমাবেশ এবং যৌক্তিক পন্থায় তাদের দাবির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনজীবনে আতংক সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকতে বলা হলেও তারা সে বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। সবশেষে জনস্বার্থে পুলিশী অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেলেও অধিকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ব্যাপক অভিযানে ৬৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা যায়, তাদের দাবি করা অনেকেই স্ব স্ব কর্মস্থলে চাকরি করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের তালিকা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয়া হলে সেই চিঠিকে গ্রাহ্য করেনি তারা। এর মধ্য দিয়ে এটাই মনে হওয়া প্রাসঙ্গিক যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণকে উস্কানী দেয়ার মাধ্যমে দেশে এবং দেশের অভ্যন্তরে তারা সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করতে চেয়েছে। এর পদক্ষেপ হিসেবে মামলা এবং ১০ বছরের বেশি সময় পর রায় হলে অধিকার স¤পাদক আদিলুর রহমান এবং পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে ২ বছরের কারাদ-ে দ-িত করা হয়। তারা যদি তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাদের দাবি অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা প্রমাণ করতে পারতেন তাহলে তো আর মামলার কোন আবশ্যকতা থাকতো না। নিছক গুজব ছড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেশের কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে তারা ছেলেখেলায় মেতে উঠেছিলেন। এর পেছনে দেশীয় অপশক্তির মদদের সাথে বিদেশী শক্তির উস্কানী সমন্বিতভাবে কাজ করেছে, যার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। আর এটা করতে পারলে এখানে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মত করে তারা তাদের স্বার্থকে চরিতার্থ করতে পারবে। যে বিষয়টি তাদের নিজের দেশের ক্ষেত্রেও অমার্জনীয় অপরাধের পর্যায়ে পরে, সেখানে আমাদের আদালতের রায়কে নিয়ে কটাক্ষ করা এবং বাতিলের দাবি করা এবং এটিকে মানবাধিকার পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদাকে ভূলণ্ঠিত করার চেষ্টা বৈ অন্য কিছু নয়।
ইইউ-র সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া এবং আমাদের রাজনীতিতে তারাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে হস্তক্ষেপ করতে চাওয়ার প্রয়াস একই সূত্রে গাঁথা। একটি দেশের আদালতের রায় নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে তারা কোন ধরণের মানবাধিকারের চর্চা করতে চেয়েছেন সেটা এক বড় প্রশ্ন। তথাকথিত কিছু মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের ১৭ কোটির অধিক মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং চর্চায় কাজ করছে নাকি এর নাম নিয়ে কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে বিদেশীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে বিষয়টি আজ সচেতন মহলের জন্য ভাবনার বিষয়।
লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক স¤পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com