স্টাফ রিপোর্টার ::
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর ঠিক পশ্চিমেই এক গ্রাম ‘জগন্নাথপুর’। এই গ্রামটিতে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশই জেলে পরিবার। দিন দিন গ্রামে লোকসংখ্যা বেড়েই চলছে। ফলে আনাগোনাও বাড়ছে। গ্রামে মাটির ঘর থেকে শুরু করে টিনশেড বাড়ি, হাফবিল্ডিংসহ স্কুল, মসজিদ, মন্দির দোকানপাট সব আছে। নেই শুধু চলাচলের একটি সড়ক। দীর্ঘদিনেও গ্রামের অবকাঠামোগত তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।
এক সময় গ্রামের পূর্ব দিকে সুরমা নদীর পাড়ে পাড়ে হেঁটে চলাচল করার মত ছিলো ছোট একটি রাস্তা। এ রাস্তা হয়েই গ্রামের মানুষজন শহরের হাট বাজার, অফিস আদালত, স্কুল কলেজসহ সকল প্রয়োজনে যাতায়াত করতেন। কিন্তু গ্রামের পূর্ব দিকে বয়ে যাওয়া সুরমার ভাঙনের কবেলে পড়ে ভেঙে গেছে সেই নদীর পাড়ের একমাত্র রাস্তাটি। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় বর্তমানে এই রাস্তাটি বিলীন হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামের বসতবাড়িও। তবে সড়কপথ যোগাযোগ সচল করতে গ্রামের মধ্যখান দিয়ে ভিন্ন একটি সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি ফেলে ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। কিন্তু সরকারি অনুদান না পাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাটির সড়কটি একই অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টিতে মাটির তৈরি একমাত্র সড়কটিতে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। যাতায়াতের সময় কাদা মাড়িয়ে হাঁটা কষ্টকর হয়ে ওঠেছে। সড়কের এমনই বেহাল দশা ঘটেছে যে গ্রামবাসীদের জন্য এ সড়ক ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত কাদা মাটি আর হাঁটু সমান পানি থাকায় সিমেন্টের বস্তায় বালি ভরে চলাচল করতে দেখা গেছে। গ্রামবাসীর একটি পাকা সড়কের জন্য দীর্ঘদিনের এতো আকুতি দেখেও সড়ক নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথপুরের স্থানীয় বাসিন্দা জানু মিয়া বলেন, আমরা এই অবহেলিত গ্রামে পড়ে আছি। আমাদের বাচ্চাকাচ্চা লেখাপড়ার জন্য স্কুলে যাইতে পারে না। রাস্তাঘাটের মধ্যে (কাদা মাটিতে) গেড়ে বসে থাকে। রাস্তার কাদামাটি স্কুলড্রেসে লেগে যায়। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন এক জায়গার মধ্যে আছি, বাজার হাটে যাওয়া যায় না, সারা সড়কে পানি আর কাদা মাটি। এতো অবহেলিত একটা গ্রামের মধ্যে আমরা আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটা আবেদন, আমাদেরকে একটু দেখেন।
নেপাল চন্দ্র বর্মণ নামের আরেজকন বাসিন্দা বলেন, সাধারণ বৃষ্টি দিলেই রাস্তাটা নষ্ট হয়ে যায়। এই এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে অন্যজনে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। এমন অবস্থা হয়, কোলে করে নেওয়া যায় না, গাড়িও চলে না, কিংবা নৌকাও এখানে চলাচল করতে পারে না। এই অবস্থায় চার-পাঁচ জনে মিলে রোগীকে ধরাধরি করে নেওয়া লাগে। জরুরি কোনো রোগী হলে বা ডেলিভারির কোনো রোগী হলে পাঁচ-দশ দিন আগে থেকে তারে নেওয়া লাগে হাসপাতালে।
গ্রামের যুবক নৃপেশ বর্মণ বলেন, আগে আমাদের কোনো রাস্তা ছিলো না। আমরা নদীর পাড়ে পাড়ে হেঁটে চলতাম। ওই রাস্তা ভেঙে যাওয়ার পর আমরা কিছু জায়গা ছেড়ে দেই। পরে চেয়ারম্যান সাব গত বছর মাটি ফেলাইছে। নতুন মাটি পড়ছে একটু বৃষ্টি হলে কাদা বেশি হয়।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমির হোসেন রেজা বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পরপরই রাস্তা করার জন্য মাটির কাজ শুরু করেছিলাম। পরে রাস্তাটা গ্রামে হইছে, আগে রাস্তাও ছিলো না। প্রথমে তারা নদীর তীর দিয়ে চলাফেরা করতো, পরে নদী ভেঙে নিলো, বর্তমানে বাড়িঘরও ভেঙে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও কোনো নজর পড়ে না। আমি তাদের কাছে ব্লকের জন্য গতবার একটা আবেদন করছিলাম। এটা অনুমোদিত হয়নি। চেষ্টা করছি মঈনপুর থেকে নিয়ে জগন্নাথপুর গ্রাম ও ইব্রাহিমপুরের দক্ষিণ দিকে পর্যন্ত ব্লক ফেলে নদীর ভাঙন ঠেকানোর। আর গ্রামের রাস্তা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে, এটা পাকা করতে হবে। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাচ্ছিনা। নির্বাচনের আগে যদি সরকারে কিছু কাজ করায়, তাইলে আমরা কিছু প্রজেক্ট পাইতে পারি। বরাদ্দ পেলেই জগন্নাথপুরে গ্রামের রাস্তাটা করবো।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, জগন্নাথপুর গ্রামে ভাঙন প্রবণতা মোটামুটি আছে। কিন্তু সেখানে আমাদের এই বছরে আপাতত কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে সেখানে কাজ করা হবে।