1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

‘গ্রামীণ শক্তি’র মামলায় হয়রানির শিকার নিরীহ মানুষ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩

শাল্লা প্রতিনিধি ::
শাল্লা সদর সংলগ্ন ডুমরা গ্রামের মৃত কৃষ্ণকান্ত দাশের ছেলে কৃপেন্দ্র চন্দ্র দাশ (৪০)। গত ২০ বছর যাবৎ ফুটপাতে চা বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। গত ৮ অক্টোবর গভীর রাতে ওয়ারেন্ট নিয়ে তার বাড়িতে হাজির পুলিশ। সহজ সরল কৃপেন্দ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রেফতার হন পুলিশের হাতে। ৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জ কোর্টে চালান করে কৃপেন্দ্র দাশকে। পরে গ্রামীণ শক্তির দায়ের করা মামলায় সৌরবিদ্যুতের ৬ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করে মুক্তি পান তিনি।
কৃপেন্দ্র দাশ বলেন, আমি গ্রামীণ শক্তির নামই শুনি নাই। কোনদিন সৌরবিদ্যুৎও আনি নাই। আমার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমার মোট ১৪ হাজার টাকা খরচ হইছে। মানসম্মানও গেছে। আমি এর বিচার চাই। কৃপেন্দ্র দাশের পিতার নাম কৃষ্ণকান্ত দাশ হলেও, মামলায় লেখা হয়েছে প্রতিকী চন্দ্র দাশ।
ডুমরা গ্রামের মন্টু সরকারের পিতার নাম মামলায় লেখা হয়েছে নদী সরকার। অথচ ওয়ারেন্টে লেখা নরেন্দ্র সরকার! মন্টু সরকার বলেন, গ্রামীণ শক্তি কী আমি জানিই না। কোনো কো¤পানির কাছ থেকে কখনও কোন সৌরবিদ্যুৎও নেই নাই। অথচ ৪ অক্টোবর রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে আমাকে। পরে দেখা যায় এই নাম মন্ত সরকারের নামে। মন্ত সরকার ইতোপূর্বেই কিস্তির ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। মাঝপথে আমি হয়রানির শিকার হলাম! এমনভাবে চলতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা দরকার।
অন্যদিকে ডুমরা গ্রামের সুবল চন্দ্র দাশের ছেলে সুজন চন্দ্র দাশ বলেন, ৪ অক্টোবর আমাকেও পুলিশ ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেফতার করে সুনামগঞ্জ পাঠায়। পরে গ্রামীণ শক্তির দায়ের করা মামলার কিস্তির ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করে মুক্তি পাই। আমি সৌরবিদ্যুতের কিছুই জানি না। গ্রামীণ শক্তি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমি ক্রয়ও করিনি। তবুও আমার নামে মামলা। ওই কো¤পানি নামে বেনামে ঢালাওভাবে নিরপরাধ মানুষকে মামলায় আসামি করেছে। সিআর মোকদ্দমা ৯১নং মামলায় ১৮জনের মধ্যে অর্ধেক মানুষই সৌরবিদ্যুৎ ক্রয় করেনি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছে। ১১ অক্টোবর (বুধবার) দুপুরে ভুক্তভোগীরা এ প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, শাল্লায় ২০১২ সালে ‘গ্রামীণ শক্তি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২-৩বছর মেয়াদী কিস্তিতে সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করেন উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক। পরে চলতি বছর (২০২৩ সালে) সৌরবিদ্যুৎ (সোলার হোম সিস্টেম) ক্রয়ের কিস্তির টাকা পরিশোধ না করার নামে হাজারো কৃষকদের আসামি করে লিগ্যাল নোটিস পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। কৃষকদের অভিযোগ মাত্র হাতেগোনা কয়েকটা কিস্তি বাকি থাকলেও নোটিসে লেখা হয় কয়েকগুণ। মামলার ভয়ে অনেকেই ধারদেনা করে টাকা পরিশোধ করেছেন। আবার কেউ কেউ কিস্তির স¤পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার পরও রেহাই পায়নি কো¤পানির হাত থেকে।
অন্যদিকে গ্রামীণশক্তি নামক প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সৌরবিদ্যুৎই নেননি এমন বহু ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা দেয়া হয়েছে। গভীর রাতে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দিচ্ছে। পরে নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে ছাড়া পাচ্ছেন নিরীহ মানুষ।
এবিষয়ে গ্রামীণ শক্তি’র পক্ষে মামলার বাদী রিকভারী অফিসার আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, নিরপরাধ মানুষের হয়রানির বিষয়ে একটা সমাধান হবে। শাল্লা শাখার ৬শ’ গ্রাহকের কাছে টাকা পাব। আনন্দপুর গ্রামেও শাখা আছে, শাখা আছে শ্যামারচরেও। তিনি আরও জানান, আরেকটি কো¤পানিও আছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের দায়েরকৃত মামলায় ক’হাজার গ্রাহকের নামে মামলা হয়েছে কিংবা কত হাজার গ্রাহক ছিল তা তিনি সঠিকভাবে বলতে পারেননি। সৌর বিদ্যুৎ বিক্রয়ের সময় গ্রাহকের নিকট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তখন ভোটার আইডি কার্ড হয়নি বলে অজুহাত ওই বাদীর। অথচ দেশে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হয়েছে ২০০৮ সালে। বাদী মামলায় উল্লেখ্য করেছেন ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর।
এ ব্যাপারে শাল্লা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকায় যাচ্ছি। নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে হওয়ায় আমার নিজেরও কষ্ট লাগে। ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন। এ পর্যন্ত শতাধিক গ্রাহকের নামে ওয়ারেন্ট এসেছে। আরও আসবে। আমি যতটুকু জানি আসামি প্রায় দুই আড়াই হাজারের মত হতে পারে।
জানা যায়, বর্তমানে গ্রামীণ শক্তির শাল্লায় কোন অফিস নেই। তবে মামলায় কার্যালয় দেখানো হয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মল্লিকপুরে আরজ আলী লন্ডনী বিল্ডিংয়ের নিচতলায়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সালে সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৪০৬, ৪২৩, ৪২২, ৫০৬ ও ১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com