সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতিকে আমি আহ্বান জানাই- জাতির ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আরো বলেন, এই দেশ আমাদের, আমরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের মাওয়া রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনকালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস।
তিনি বলেন, আজকে যারা ভোটের কথা বলে, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে- আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই এদেশে অবাদ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধোঁয়া তুলে আমাদের প্রতিদিন ক্ষমতা থেকে হটায় তারা কখনো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না। কারণ তাদের প্রতিষ্ঠাই হয়েছে একজন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে এবং ভোট চুরি করা ছাড়া কোনদিন ক্ষমতায় আসে নাই। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩০০ আসনে মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, সামান্য একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বয়সের কারণে, সেটা বলার জন্য বিশ্বব্যাংক তার পক্ষে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপরই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। স্থানীয় সংসদ সদস্য (মুন্সিগঞ্জ-২) সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ও প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের প্রকল্পটি যেটা ভাঙ্গা পর্যন্ত এখন করেছি সেটা ভাঙ্গা থেকে যশোরে সংযোগ হবে। আর যশোর থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। এমনকি বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে পায়রা পর্যন্ত এই রেললাইনকে যুক্ত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। যদিও সেখানে মাটি নরম থাকায় কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তবে এ ব্যাপারে সাম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চরছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করাই তার সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে সবকিছু যাতে স্মার্ট হয় তা নিশ্চিত করাই তার সরকারের লক্ষ্য’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এই প্রকল্পে রেললাইন ছাড়াও নির্মাণ করা হয়েছে সুপরিসর ওয়েটিং রুম, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক টয়লেট, যাত্রীদের উঠানামার সুবিধার্থে লিফট, এক্সিলেটর, বেবি কেয়ার কর্নারসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৪টি নতুন স্টেশন। মানোন্নয়ন করা হচ্ছে ৬টি রেলওয়ে স্টেশনের। এর মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ৬০টি মেজর ব্রিজ, ১৪৪টি কালভার্ট, ১২৮টি আন্ডারপাস। ২০টি স্টেশনে স্থাপন করা হচ্ছে আধুনিক কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিগন্যালিং ব্যবস্থা। ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গাতে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ও সুবিশাল ওভারহেড স্টেশন। ঢাকা হতে যশোর পর্যন্ত স্টেশন এলাকায় ও রেল লাইনের দুইপাশে রোপন করা হচ্ছে ১০ লাখের বেশি ফলদ, বনজ ও ঔষধি প্রজাতির গাছ।