হোসাইন আহমদ ::
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, যেকোনো দেশ তার নিজের সুবিধার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিতেই পারে। সেটা তাদের ব্যাপার। আমরাও তো নিষেধাজ্ঞা দেই মাঝে মাঝে। চাপে নয় আমাদের বরং তৈরি থাকতে হয়। গৃহস্থ যেমন ঝড়-ঝাপ্টা মোকাবিলায় তৈরি থাকে আমাদের সরকারও সেভাবে তৈরি আছে। জনগণের সুরক্ষার জন্য, উন্নয়নের জন্য সরকারকে ঝুঁকি নিতে হয়, হিসাব-নিকাশ করতে হয়। এখানেও আমাদের সরকার প্রধান ঝুঁকি নেন, হিসাব নিকাশ করেন। আমরা জেনেশুনে আমাদের জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ আমরা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে করি না।
শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার মন্ত্রীর বাসভবনে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি ও তাদের দোসরদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতন ঘটানোর চিন্তা একেবারে অসম্ভব। যেটা অসম্ভব সে বিষয়ে আমি কোন কিছুই বিশ্বাস করি না। আমি বাস্তবতায় বিশ্বাসী। যেটা সামনে আছে সেটায় বিশ্বাস করি। সেই বিচারে আমি গনকের লাইনে কল্পনাপ্রসূত কথাবার্তায় বিশ্বাস করি না।
রিজার্ভ ঘাটতি প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, আমাদের অর্থনীতি চাপের মাঝে আছে সেটা সরকার প্রধান নিজেই স্বীকার করেছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এর ফলে নি¤œ আয়ের মানুষ যাদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ তারা কষ্টে আছেন। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার নানা কৌশলে কাজ করছে। ফলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, বাড়েনি। আগামীতে আরো কমবে। তবে এটা কোনো সংকট নয়।
তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ লাফালাফি করে কমছে। এটা একটা জায়গায় গিয়ে থামবে। আমাদের হাতে এখনো তিন মাসের আমদানী ব্যয় পরিশোধ করার মত রিজার্ভ আছে। এছাড়া এসব বিষয়ে অর্থনীতি বিষয়ে পন্ডিত আইএমএফ আছে। তারা কিন্তু সংকট বলেনি। তারা অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে নানা রকম দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের জন্য হুমকি বিরোধীদলের এমন মন্তব্যের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আরেক উচ্চস¤পন্ন টেকনিক্যাল ব্যাপার। বিশ্বের কেউ কেউ পারমাণবিক কেন্দ্র বন্ধ করছে কারণ এগুলো পুরনো টেকনিক্যাল দ্বারা পরিচালিত। তবে আমার কাছে খবর আছে কেউ কেউ নতুন টেকনিক্যাল ব্যবহার করে নতুন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। আমাদের সরকার মনে করে প্রতিটি জিনিস হাতের মুঠোয় আনার জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত। আমরা সেটা করছি। ফলে আমরা সেটি আমাদের হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাজারও ভালো দিক আছে আমরা সেগুলো পাবো। আধুনিক তরুণ প্রজন্ম এটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আমি নিজেও উচ্ছ্বসিত।
সরকার মেগাপ্রকল্পের নামে জনগণের অর্থের অপচয় করছে বিরোধীদলের এমন মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এগুলো কেউ বিরোধিতার জন্য বলে, কেউ নিজের স্বার্থের জন্য বলে, কেউ বাহাদুরী করার জন্য বলে। বলতে পারে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু দেশের জনগণ যারা দেশের মালিক তারা আরো বেশি পদ্মাসেতু চায়, মেট্রোরেল আরো চায়, টানেল আরো চায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আরো চায়। এসব নির্মাণ করতে ঝুঁকি অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা মোকাবিলা করার জন্য কৌশল, জ্ঞানবুদ্ধি, বিদ্যা সবই আওয়ামী লীগ সরকারের আছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দলীয় প্রধান আছেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা আছেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই আওয়ামী লীগ সরকার আবারো ক্ষমতায় আসবে। কারণ দেশের মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে, জীবনমান উন্নত করার স্বার্থে আওয়ামী লীগকে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় বসাবে।
অপরদিকে শান্তিগঞ্জস্থ পরিকল্পনামন্ত্রীর বাসভবনের মুন্সী আরফান আলী বৈঠকখানায় শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। এসময় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিতাংশু শেখর ধর সিতু, সাধারণ স¤পাদক হাসনাত হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির আয়োজেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের বিদায় ও ২০২৩ সালে যোগদানকৃত সহকারী শিক্ষকণগণের বরণ উপজেলা সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।