স্টাফ রিপোর্টার ::
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখা, সদর উপজেলা ও পৌর শাখার উদ্যোগে শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, এবার জেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. বিমান কান্তি রায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে সম্প্রীতির একটি উদাহরণ আছে। কোনো সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এবারও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করা হবে। এই জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অফিসার ইনচার্জ ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পূজা উদযাপন শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন আপনারা। পুলিশ বাহিনী সবসময় আপনাদের পাশে আছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক মণ্ডপে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করুন এবং দৃশ্যমান স্থানে কাগজে লিখে সাঁটিয়ে রাখবেন যে, “এই মণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আছে।” তখন অপরাধীরা অপরাধ করতে সাহস পাবে না।
ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যেসব মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেসব মণ্ডপে বেতনধারী পাহাদার নিয়োগ করে দেন। নিজেরাও দিনে রাতে নজরদারি রাখবেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর একটি মহল ফেসবুকে গুজব ছড়ায়। পরে সত্যতা পাওয়া যায় না। যদি ছোটখাটো কোনো অঘটন ঘটে, তবে ম-প কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং পুলিশকে জানাবেন। আমরা দ্রুত বসে সমস্যার সমাধান করব। তিনি আরও বলেন, প্রতিমা বিসর্জন যত তাড়াতাড়ি শেষ করবেন, ততই আমরা দ্রুত চিন্তামুক্ত হতে পারবো।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিশ্বম্ভরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক। তিনি বলেন, পূজার মাধ্যমে পরম সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু তা না করে মদ্যপান করে মাতাল হয়ে মা-বোনদের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া, এটা গুরুতর অপরাধ। যেখানে মা থাকবেন, সেখানে মদ থাকবে না। কোনো অনাচার থাকবে না। এবারের পূজায় বিশ্বম্ভরপুরে কোনো মদ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বম্ভরপুর যোগদানের পর ঘোষণা দিয়েছি, শ্যামল বণিক থাকবে যেখানে, সেখানে মদ থাকবে না।
প্রফেসর পরিমল কান্তি দে বলেন, পূজা চলাকালীন কেউ যেন অতিউৎসাহী হয়ে কোনো রূপ সমস্যার সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফেসবুক পেইজে নানা রকম ভিত্তিহীন অপ্রীতিকর ঘটনা প্রচার করতে পারে। এই জন্য সচেতন থাকতে হবে সকলে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ঘটনায় উদ্যোগ নেবো না। পুলিশকে এই বিষয়ে জানাবো। প্রশাসন তা দেখবে। তিনি আরও বলেন, পূজা ম-প নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। দায়িত্বও নিয়েছে রাষ্ট্র। তাই আমরা প্রশাসনকে সব বিষয়ে জানাবো এবং সহযোগিতা করবো। নিজেরা কোনো উদ্যোগ নিয়ে ঘটনার বিস্তৃতি ঘটাবো না।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বিমান কান্তি রায় বলেন, পূজা মণ্ডপকে নিরাপদ রাখতে সি সি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাননীয় জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রতি পূজা মণ্ডপে ৫শ’ কেজি করে চাল সমপরিমাণ বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যেক পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা অবশ্যই স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। তিনি বলেন, এবার সারা জেলায় ৪২৬ পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত ১৯টি মণ্ডপ রয়েছে। পৌরসভা এলাকায় ২৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। সকলে সঠিক দায়িত্ব পালন করে পূজা উদযাপন এলাকা নিরাপদ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দীপক ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক রবিন আচার্য্য, জেলা পূজা উদযাপন জাতীয় পরিষদের সদস্য সুব্রত বসু, সংগঠনের উপদেষ্টা দেবব্রত দাস, সহ-সভাপতি স্বপন কুমার দাস, চন্দন কুমার রায়, অ্যাড. গৌরাঙ্গপদ দাস, ডা. নিলয় রায়, সাবেক কাউন্সিলর কলি তালুকদার আরতি, বিপ্রেশ রায় বাপ্পি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রাধাকান্ত সূত্রধর, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরী আঁচল, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ রায়।
এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রুপালী সোম, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জবা ঘোষ, শান্তিগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি জ্যোতিভূষণ তালুকদার ঝন্টু, তাহিরপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গণেশ তালুকদার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি স্বপন কুমার বর্মণ, দিরাই উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাধীন দাস, সাবেক পৌর কমিশনার মতিলাল চন্দ, মিন্টু চৌধুরী, খোকন আচার্য্য, বাবুল রায়, কৃপেশ চন্দ, ঝন্টু তালুকদার।