মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী ::
দোয়ারাবাজার উপজেলার চিলাই, মৌলা, খাসিয়ামারা, মরাচেলা পাহাড়ি নদীগুলো দীর্ঘদিন ধরে বালুখেকোদের কবলে রয়েছে। এরা শাসন করে খুবলে খুবলে খায়। তন্মধ্যে খাসিয়ামারা, সোনালিচেলা ইজারা দেয়া হলেও মানা হচ্ছে না ইজারার নিয়মনীতি। পাড় কেটে অব্যাহত বালু উত্তোলন এবং নদীর তীর, চর দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় নদী ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে উপজেলার অন্যতম পাহাড়ি নদী চিলাই। ওই নদী জলমহালের জন্য ইজারা দেয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খুবলে খাচ্ছে বালিখেকোরা। এ কারণে নদীর পাড় ভেঙে বসতি বিলীন হচ্ছে এবং নদীর পাড় কাম ফসলরক্ষা বাঁধও ভেঙে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে পাহাড়ি ওই নদীর ওপর এমন অত্যাচার হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
বালুখেকো চক্রের লোকজন বলছেন, স্থানীয় অফিসকে ম্যানেজ করেই তারা দেদারসে বালি বিক্রি করে আসছেন। আগে দিনে বালি উত্তোলন করা হতো এখন রাতে বালি তুলে ট্রলার বোঝাই করে বিক্রি করা হয়।
এদিকে, বালু উত্তোলন-আহরণ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্টদের নমনীয়তার কারণে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করা হলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে।
ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে আসা দোয়ারাবাজারের বাংলাবাজার, বোগলা, সুরমা, দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদী ‘চিলাই’ মিলিত হয়েছে সুরমা নদীর সঙ্গে। ওই নদীর দুই তীর ঘেঁষে সুন্দরপই রইছপুর, রাখালকান্দি, গোজাউড়া, রামনগর, বাঘমারা, ভোলাখালি, ভিখারগাঁও, বালুচরা, উরুরগাঁও, কিরণপাড়া ও বাঘরাসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম রয়েছে। অব্যাহত পাড় ভাঙনের ফলে ওই নদী হতে বালি উত্তোলনে স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
স্থানীয়রা বলেছেন, চিলাই নদীতে বালু কমে গেছে, এরপরেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনেক গভীর থেকে তোলা হচ্ছে বালু। গভীর রাতে ড্রেজার মেশিনসহ শত শত বারকি নৌকায় বালু উত্তোলন করা হয়। গেল বছর এভাবে উত্তোলন করা বেশকিছু বালু জব্দ করে কম মূল্যে নিলাম দেয়া হয়েছিল। নিলামে বিক্রয় করা বালু বহনের অজুহাতে দিনের বেলায়ও বালু উত্তোলন করে বিক্রয় করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এখন রাতের বেলায় ড্রেজার মেশিনের তা-ব চলছে। এ কারণে নাইন্দার হাওরের বেড়ি বাঁধের একাংশ নদীতে বিলীন হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের রইছপুর গ্রামের রুস্তম আলী বলেন, চিলাই নদীতে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এতে নদী ভাঙনে ক্ষতির শিকার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাখালকান্দি গ্রামের আব্দুল মালেক কাজী বলেন, ড্রেজার মেশিনের শব্দে রাতে ঘুমাতে পারছি না। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত বালু তুলে তারা বিক্রি করে।
বাংলাবাজার ইউনিয়নের কিরণপাড়া গ্রামের সমছু মিয়া বলেন, প্রতিনিয়ত ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। প্রতিটি বসতভিটা ভরাট করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। প্রকাশ্যে বালু বিক্রি হলেও যেন দেখার কেউ নেই।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রব্বানী চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এমন চলে আসছে। আমি যোগদানের পর কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি, বালিখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।