1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৫৩ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ভাবমূর্তি বা ইমেজ : মিনার সুলতান

  • আপডেট সময় রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩

ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে একটা গল্প পড়ানো হতো। গল্পটা আবারও বলছি- বাবা তার পাঁচ সন্তানদের ডাকলেন। সবাইকে একটা করে লাঠি দিয়ে তা ভাঙতে বললেন। পাঁচ সন্তানই একটা করে লাঠি অনায়াসেই ভেঙে ফেলল। এইবার আরও পাঁচটা লাঠি একসাথে করে পাঁচজনকে দিলেন। কেউই জোটবদ্ধ লাঠি ভাঙতে পারল না। তখন বাবা সন্তানদের বললেন, যদি সবাই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করো, তবে কখনো শান্তি আসবে না। সবাই মিলে একসাথে থাকলে শান্তি আসবে।
এই গল্পটা এখন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক। যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক স্যাংশন দিচ্ছে বাংলাদেশকে। সময়টা সংকটপূর্ণ। তাতে সার্বিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। অথচ এই সংকটে দেশের সব রাজনৈতিক দল একসাথে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারতো। তা না হয়ে হচ্ছে তার উল্টো। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে বিএনপি বলছে, ইতিবাচক। কীভাবে তা ইতিবাচক হয়?
বিএনপির রাজনৈতিক নেতারা তাদের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে বরং গল্পের মতো নিজেদের বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে বাইরের দেশের কাছে। বিএনপি নেতারা ভাবছে, আজকে তারা ক্ষমতায় নেই দেখে বুঝি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বা নিষেধাজ্ঞা ভালো হয়েছে। কিন্তু দিনের পরেই আসে রাত। আজকে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেছেন কাল সেই নিষেধাজ্ঞা দেশের যেকোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে হতে পারে। তখন তারা কী বলবে?
যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেড়ায়। এটাই তাদের কাজ। বাংলাদেশ ছাড়াও যে ৫ দেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র- নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, হাইতি, সুদান ও নিকারাগুয়া। তারও আগে কম্বোডিয়া, আইভোরি কোস্ট, ইরান, উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়।
আরও মজার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র যেসব কারণে বিভিন্ন দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সেইসব সংকট যুক্তরাষ্ট্রেই বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি মূলত বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার, শিল্পপতি ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেখানে নৈতিকতা, স্বাধীনতা বা গণতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। অথচ তারা বিভিন্ন দেশে এইসব সংকট খুঁজে খুঁজে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
প্রশ্ন হলো, সংকটে কেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে থাকে না? তার বড় কারণ হলো, পরশ্রীকাতরতা। অর্থাৎ পরের শ্রী বা উন্নতি দেখে যখন নিজের মধ্যে হিংসা জেগে ওঠে। বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে পরশ্রীকাতরতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
বিএনপি জামায়াত জোট কোনোভাবেই অন্যের শ্রী বা ভালো দেখতে চাইছে না। তাই তারা ভাবছে যেহেতু তারা এখন ক্ষমতায় নেই তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা যৌক্তিক। কিন্তু তারা এটা ভাবছে না, যুক্তরাষ্ট্রের কাজই হলো সব দেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেড়ানো। কথায় আছে না, ফিতা ফিতা কাটতে কাটতে মানুষ খুন করা কারও কারও অভ্যাস হয়ে যায়। তারা আজ নিষেধাজ্ঞা যে অভ্যাস তৈরি করছে, সেই নিষেধাজ্ঞা কাল দেশের যেকোনো দল, রাজনৈতিক নেতা বা গণমাধ্যমের ওপর আসবে। এতে করে দেশের ভাবমূর্তি যে ক্ষুণœ হচ্ছে তা বিএনপি জামায়াত না বুঝলে অন্যান্য দেশ ঠিকই বুঝেছে।
আরেকটা বড় বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ হিসেবে আÍপ্রকাশ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উপেক্ষা করা সম্ভব না যুক্তরাষ্ট্রের। উপেক্ষা যেহেতু করতে পারছে না তাই নতুন নতুন ধারা বের করে সেইসব ধারায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করায় তাদের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর যুক্তরাষ্ট্রের এই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া ২০১৩ সালের জানুয়ারির ৩০ তারিখে ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় ‘তওঅ: ঞযব ঃযধহশষবংং ৎড়ষব রহ ংধারহম ফবসড়পৎধপু রহ ইধহমষধফবংয’ শিরোনামে যে কলাম লেখেন সেই লেখা পড়লে রাজনীতি না জানা মানুষও বুঝতে পারবেন বিএনপি কতটা সুনিপুণভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে মাঠে নেমেছে।
এই কলামে খালেদা জিয়া উল্লেখ করেন, বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা, বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় যাওয়া ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াসহ অনেক বিষয়। সেই আহ্বানের পূর্ণরূপ দেখছি আজ।
দেশের সংকটে দেশের ভেতরে কথা বলার সুযোগ আছে, কিন্তু দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেওয়ার আহ্বান কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইতিহাসের পুরোনো সেই কথা মনে পড়ছে বারবার, বঙ্গবন্ধুর সপরিবারের হত্যার পর কর্নেল (অব.) শাফায়েত জামিল জিয়াউর রহমানের কাছে ছুটে যান। ঘটনা শোনার পর জিয়া বললেন, ‘সো হোয়াট, প্রেসিডেন্ট ইজ কিলড; ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার, আপ হোল্ড দ্য কনস্টিটিউশন।’
এই দলের সৃষ্টি যখন এইরকম মানসিকতা দিয়ে শুরু তখন সেই দলের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞায় সব দলের উচিত ছিল জোটবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করা। না হয়, বাইরের দেশ এসে আমাদের অনেক বিষয়ের স্বাধীনতা হরণ করবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com