1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোটের অবাধ বিচরণ : মানা হচ্ছে না নীতিমালা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া ::
টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে পর্যটন নীতিমালা না মেনে প্রতিদিন অবাধে চলছে ট্যুরিস্ট এজেন্সির বিভিন্ন বড় নৌকা ও হাউসবোট। এগুলোর বেশির ভাগের মালিক সুনামগঞ্জের বাইরের। তারা এখানে অর্থ লগ্নি করে লাভবান হলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং স্থানীয় ছোট ছোট নৌকাগুলো পর্যটক হারিয়ে অলস সময় পার করছে। পাশাপাশি এর সাথে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়েছেন। অথচ ৫-৬বছর পূর্বেও দাপট ছিল পরিবেশবান্ধব ছোট ছোট নৌকাগুলোর। অন্যদিকে নিয়মনীতি না মেনে হাওরে অবাধে চলাচল করছে হাউসবোট। এতে টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য্য হুমকির মধ্যে পড়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যেই মাথা তুলে ভেসে থাকা হিজল করচ গাছ, পাখিদের উড়াউড়ি আর পাশেই ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়। পাহাড় থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি ছড়া মিশেছে হাওরে। হাওর, মেঘ, ছড়া আর পাহাড়ের এমন সম্মেলিত রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশ বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসে হাওরে। ফলে হাওরে পর্যটন ব্যবসা বেশ জমজমাট হলেও তাও আবার হাউসবোটের দখলে। আধুনিক সুযোগ সুবিধার জন্য এসব নৌযানেই ভিড় করেন আগত পর্যটকগণ। ফলে বর্ষায় হাওরে ২০০ থেকে ২৫০ ছোট নৌকা চললেও এখন কাক্সিক্ষত পর্যটক না পাওয়ায় একশর নিচে নেমে এসেছে এর সংখ্যা। অপরদিকে হাউসবোটগুলো হাওর ধ্বংসে মেতেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না হাউসবোটের সংশ্লিষ্টরা।
টাঙ্গুয়ার হাওরেপাড়ের বাসিন্দা আমিন মিয়া ও জাহান মিয়া বলেন, হাউসবোটের ভিড়ে হারিয়ে গেছে প্রায় দুই শতাধিক ছোট নৌকা। প্রশাসনের নীতিমালা অনুযায়ী হাউসবোট নামানোর আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আয়ের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। এছাড়াও প্রতিটি নৌকায় গ্যাস সিলিন্ডার না থাকা, টয়লেটের ময়লা, প্লাস্টিক আবর্জনা হাওরের পানিতে না ফেলার নিদের্শনা না থাকলেও তা মানছে না কেউ। হাওরের চারপাশ ও ট্যাকেরঘাট এলাকায় পর্যটকদের ফেলা ময়লায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
তাহিরপুর নৌ পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি শাহীনুর তালুকদার জানান, যে নৌকা দিয়ে আগে ৫শ-৭শ টাকা আয় করা যেত এখন সেই নৌকায় ১৫০-২৫০ টাকাও হচ্ছে না। এদিকে বাইরের নৌকাগুলো থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। একেকটি হাউসবোট ২০-৩৫ লাখ টাকার বেশি তৈরি। সেখানে আমাদের ১ লাখ টাকায় বানানো নৌকার কোনো মূল্য নাই। আর নৌকার বা হাউসবোটে ব্যবসা করছেন ঢাকার লোকজন। এখানে হাউসবোডগুলো কোন নীতিমালা মানছে না।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ স¤পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওর শুধু সুনামগঞ্জের সম্পদ নয়, এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। হাওরকে হাওরের মতো থাকতে দিতে হবে। আমি মনে করি টাঙ্গুয়ার হাওরের এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। এই হাওরকে বাঁচাতে হলে পরিবেশবান্ধব পর্যটন গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে একে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক সহযোগী ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডাহুকের পরিচালক মো. মাগফি রেজা সিদ্দিক বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে যে পরিমাণ পর্যটক প্রবেশ করছেন আর তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য পানিতে ফেলছেন, তাতে হাওরের তলদেশ এবং এই উপজেলায় কয়েক কোটি টাকার প্লাস্টিক বর্জ্য জমে আছে। যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। পর্যটনকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি পর্যটনকে কেন্দ্র করে হাওরপাড়ের মানুষের কর্মসংস্থান সুযোগ করতে পারলে তারাও উপকৃত হবে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ইঞ্জিনচালিত নৌযানগুলোকে কোনোভাবেই টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তবে কেউ যদি স্থানীয় নৌকাগুলোতে প্রয়োজনীয় সেফটি নিয়ে যান তাহলে তারা ভ্রমণ করতে পারবেন। সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কোনো অনিয়মকে ছাড় দেয়া হবে না।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com