জগন্নাথপুর প্রতিনিধি ::
জগন্নাথপুরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের হস্তক্ষেপে বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সৃষ্ট বড় ধরনের বিরোধ অবশেষে নিষ্পত্তি হয়েছে। এতে স্থানীয় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে।
জানাগেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি হাজী সুন্দর আলী ও রাণীগঞ্জ বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আ.লীগ নেতা ধনেশ চন্দ্র রায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের সুবাদে তারা বিভিন্ন ব্যবসা যৌথভাবে করে আসছিলেন। এর মধ্যে বিগত ২০১৭ সালে বৈধভাবে বালি বিক্রির ব্যবসা করেন। এ ব্যবসায় ১০ জন সম্পৃক্ত ছিলেন। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের নাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন একাই ৫০ ভাগ ও বাকি ৫০ ভাগে সম্পৃক্ত ছিলেন রাণীগঞ্জের হাজী সুন্দর আলী, ধনেশ চন্দ্র রায় সহ ৯ জন। তাদের যৌথ ব্যবসার হিসাব-নিকাশ শেষে বিগত ২০১৮ সালে ব্যবসা শেষ হয়ে যায়। তবে তাদের যৌথ এ ব্যবসা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও ছিল।
অপরদিকে, আরো প্রায় এক মাস আগে ধনেশ চন্দ্র রায় ও হাজী মকবুল হোসেন মিলে পৃথক আরেকটি বালু বিক্রির ব্যবসা করেন। এ ব্যবসার হিসাব-নিকাশ বিগত ২০২২ সালে শেষ হয়েছে। এ ব্যবসার সাথে ধনেশ চন্দ্র রায় ও হাজী মকবুল হোসেন ব্যতীত আর কেউ জড়িত ছিলেন না।
তবে চলতি ২০২৩ সালে এসে অজানা কারণে হাজী সুন্দর আলী ও ধনেশ চন্দ্র রায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এখান থেকেই শুরু হয় তাদের বিরোধ। এর মধ্যে গত প্রায় দুই মাস আগে হঠাৎ করে হাজী সুন্দর আলী গং ধনেশ চন্দ্র রায়ের কাছে পূর্বে ১০ জন সম্পৃক্ত বালু বিক্রির ৯৬ লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করেন। তা শোনে ধনেশ চন্দ্র রায় হতবাক হন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তার উপর এ নিয়ে দুইবার স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের জড়ো করে ধনেশ রায়ের কাছে টাকা পাওনার বিষয়ে জানানো হলে সামাজিক চাপে ধনেশ রায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ ঘটনার কোন সমাধান না হওয়ায় দিনেদিনে বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করে এবং বড় ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে ধনেশ চন্দ্র রায় বাদী হয়ে হাজী সুন্দর আলীসহ ৩ জনকে বিবাদী করে ঘটনার বিস্তর তুলে ধরে জগন্নাথপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে উভয়পক্ষ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের শরণাপন্ন হন। অবশেষে মন্ত্রী মহোদয়ের লিখিত ও মৌখিক নির্দেশনায় তাদের বিরোধটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার জগন্নাথপুর থানা ভবনে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথপুর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ূম মশাহিদ, রাণীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ছদরুল ইসলাম, মৌলভীবাজারের নাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন, জগন্নাথপুর পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইকবাল হোসেন ভূইয়া, থানার এসআই জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার, পক্ষগণের মধ্যে হাজী সুন্দর আলী ও ধনেশ চন্দ্র রায় প্রমুখ।
বৈঠকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনাসহ দীর্ঘ আলোচনা শেষে উভয়ের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয় এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়াতে উভয়পক্ষসহ স্থানীয় জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। এ সময় তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়কেও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে হাজী সুন্দর আলী জানান, আগামী ২ মাসের মধ্যে উচ্চ আদালত থেকে বালু বিক্রির কাগজ দেখানোর শর্তে বিষয়টি আপাতত নিষ্পত্তি হয়েছে। ধনেশ চন্দ্র রায় জানান, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ায় খুব খুশি হয়েছি। এতে প্রমাণিত হয়েছে, তারা আমার কাছে বালু ব্যবসার কোন টাকা পাওনা ছিল না। যদিও এ ঘটনায় আমি ও আমার পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে আদালতের কাগজ আমি দেয়ার কথা নয়।
স্থানীয়রা বলেন, মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। বর্তমানে এলাকায় স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।